নয়াদিল্লি: দিল্লির লাল কেল্লায় উদযাপিত হচ্ছে দেশের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস৷ লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে সপ্তমবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েই শুরু হয় প্রধাণমন্ত্রীর ভাষণ৷ প্রণাম জানান স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহিদদের৷ কুর্নিশ জানান দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সকলকে৷ সেই সঙ্গে আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দেন নমো৷ লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘ভারত আত্মনির্ভর হবেই। আমার দেশের নাগরিকদের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস আছে। আমাদের দেশবাসীর সংকল্পের উপর আমার বিশ্বাস আছে। ইতিহাস সাক্ষী ভারত যা ভাবে, তা ভারত করে।’’
আরও পড়ুন- এক দেশ, এক স্বাস্থ্য! স্বাধীনতা দিবসে ‘জাতীয় হেলথ ডিজিটাল মিশনে’র ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির জন্য এই বছর স্বাধীনতা দিবসে ছোট ছোট বাচ্চারা উপস্থিত হতে পারেনি৷ বহু মানুষ, বহু পরিবার করোনা সংকটে প্রভাবিত হয়েছেন৷ বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে৷ এই সকল পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি৷ এই সংকটে দিনরাত মানুষের সেবা করা সকল করোনা যোদ্ধাকে প্রণাম জানান প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে দেশ একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি৷ এই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় রাজ্যের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে কেন্দ্রও৷ বহু মানুষ স্বজনকে হারিয়েছে তাঁদের সকলের প্রতিও তিনি সমবেদনা জানান৷
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘আজ নতুন সংকল্প, নতুন প্রেরণা অর্জনের দিন৷ আগামী দুই বছরের জন্য অনেক বড় সংকল্প নিয়ে আমাদের এগোতে হবে৷ দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ইচ্ছা শক্তি, সংকল্প শক্তি আমাদের জয়ী করবে৷ স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে যখন আমরা প্রবেশ করব এবং স্বাধীনতার ৭৫ বছর যখন পূর্ণ করব আমাদের সংকল্পপূর্তির মহাপর্বও উদযাপিত হবে৷’’ তাঁর কথায়, ১৩০ কোটি দেশবাসী আজ আত্মনির্ভর হওয়ার সংকল্প নিয়েছে৷ আত্মনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন আজ সংকল্পের রূপ নিয়েছে৷ ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শুধু একটা শব্দ নয়, ১৩০ কোটি দেশবাসীর মন্ত্র হয়ে গিয়েছে৷
আরও বলেন, ‘‘২০-২১ বছর বয়স হলেই ছেলেমেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়৷ আমাদের দেশ ৭৫ বছরের স্বাধীনতার দোড়গোড়ায়৷ ভারতের আত্মনির্ভর হওয়া অনিবার্য৷ ভারত এই স্বপ্ন চরিতার্থ করবেই৷ দেশের নাগরিকের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে৷ দেশের প্রতিভার প্রতি আমি গর্বিত৷ সারা দুনিয়া জানে ভারত একবার মনস্থির করলে, তা করে দেখাবেই৷ আত্ম নির্ভর হওয়ার আগে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে৷’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় ভারতের মতো বিশাল দেশের যোগদান বাড়াতে হবে৷ বিশ্বকল্যাণের কথা ভাবাও ভারতের কর্তব্য৷ এর জন্য ভারতকে আত্মনির্ভর হতে হবে৷ নিজেদের শিকর মজবুত হলে বিশ্বের কল্যাণের জন্যও পদক্ষেপ করতে সক্ষম হব৷ লালা কেল্লায় দাঁড়িয়ে নমো বলেন, ‘‘আমাদের দেশ প্রাকৃত সম্পদে ভরপুর৷ কিন্তু আমরা কতদিন এভাবে গোটা বিশ্বকে কাঁচামাল সরবরাহ করব? কতদিন আমরা বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে তৈরি পণ্য আমদানি করব? এবার সময় এসেছে। আমাদের আত্মনির্ভর হতে হবেই। আজ আমাদের কৃষকরা দেখিয়ে দিয়েছেন। আজ কৃষিক্ষেত্রে আমরা আত্মনির্ভর। আজ বিশ্বের যে কোনও দেশকে আমরা খাদ্যশস্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি। কৃষিক্ষেত্রকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ সময় এসে গিয়েছে, এবার ভারতে তৈরি পণ্য গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হবে।”
আরও পড়ুন- গালওয়ানে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শত্রুদের জবাব দেওয়ার বার্তা রাষ্ট্রপতির
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, আত্মনির্ভর হতে হলে দেশের মাটিতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’কে আমাদের আপ্তবাক্যে পরিণত করতে হবে। আত্মনির্ভরতার এই লড়াই যে সহজ নয়, সেটাও মেনে নিয়েছেন নমো। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, অনেকেই রসিকতা করেন। আমি জানি আমাদের সামনে এখনও লক্ষ লক্ষ বাধা আছে, চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু আমাদের সামনে লক্ষ লক্ষ বাধা যেমন আছে, তেমনি কোটি কোটি সমাধানও আছে। আসুন আমরা একজোট হয়ে সংকল্প করি, স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরের আগে আমরা শপথ নিই, এখন থেকে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ই আমাদের আপ্তবাক্য হয়ে উঠুক।”