নয়াদিল্লি: করোনাকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ লকডাউন শেষ হলেও করোনা যে এখনও যায়নি তা আরও একবার দেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিলেন তিনি৷ তাঁর বার্তা, উৎসব যতই আসুক, সকলকে সাবধান থাকতে হবে৷ সুস্থ থাকতে হবে৷ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলতে হবে৷
আরও পড়ুন- চটজলদি লকডাউনের সিদ্ধান্তেই বাজিমাত, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে: প্রধানমন্ত্রী
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা বিরোধী লড়াইয়ে জনতা কার্ফু থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক দেশবাসী একটা লম্বা সফরের মধ্যে দিয়ে এসেছে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি আসছে৷ নিজেদের দায়দায়িত্ব পালনের জন্য অধিকাংশ মানুষকেই প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বেরতে হতে হচ্ছে৷ দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের মরশুম৷ বাজারের জৌলুসও ফিরছে৷ ধীরে ধীরে লকডাউন উঠে গিয়েছে৷ কিন্তু এটা ভুললে চলবে না ভাইরাস এখনও যায়নি৷ গত সাত আট মাসে সকলের প্রচেষ্টায় ভারত একটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে৷ এই পরিস্থিতি যাতে বিগড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ বরং আরও শুধরাতে হবে৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছে। গতকাল সোমবারই কেন্দ্র নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানিয়ে দিয়েছে, করোনার শিখর পেরিয়ে এসেছে দেশ। তবে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি দেওয়া চলবে না বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেও আজ শোনা গেল সেই সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সুস্থতার হার বেশ ভালো৷ মৃত্যুর হারও অনেক কম৷ ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে মৃতের সংখ্যা ৮৩৷ কিন্তু আমেরিকা, ব্রাজিল, স্পেন, ব্রিটেনের মতো দেশে মৃতের সংখ্যা ৬০০-রও বেশি৷ তিনি জানান, করোনা রোগীদের জন্য দেশে ৯০ লক্ষের বেশি বেড রয়েছে৷ ১২ হাজার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে৷ করোনা টেস্টিংয়ের জন্য ২ হাজার ল্যাব রয়েছে৷ টেস্টিংয়ের সংখ্যা খুব শীঘ্রই ১০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে যাবে৷ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘সেবাই পরম ধর্ম’ এই মন্ত্র নিয়েই আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তীকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছে৷ কিন্তু এই সময় বেপরোয়া হলে চলবে না৷ করোনা চলে গিয়েছে, বা করোনা থেকে কোনও ভয় নেই, এমনটা ভাবলে চলবে না৷
আরও পড়ুন- কমল নাথের ‘আইটেম’ মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক, ড্যামেড কন্ট্রোলে রাহুল
নমে বলেন, সম্প্রতি দেখা গিয়েছে কিছু মানুষ সতর্কতা অবলম্বন করা বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা খুবই ঢিলাই দিয়েছেন৷ মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরনোর অর্থ, শুধু নিজেকে নয়, নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলা৷ অমেরিকার মতো দেশে করোনা কমতে শুরু করলেও ফের উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে৷ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের আগে অবহেলা করলে চলবে না৷ যতদিন না ভ্যাকসিন আসছে, ততদিন ঢিলে দেওয়া যাবে না৷ মানবতাকে বাঁচানোর জন্য সারা বিশ্বে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে৷ আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরাও দিনরাত চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ আমাদের দেশে করোনার অনেকগুলি ভ্যাকসিনের উপর কাজ চলছে৷ বেশ কয়েকটি অ্যাডভান্স স্টেজে রয়েছে৷ ভ্যাকসিন আসার পর তা দ্রুত প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে কী ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেও কাজ শুরু করে দিয়েছে সরকার৷
তিনি বলেন, উৎসবের সময় আনন্দের সময়, খুশির সময়৷ কিন্তু এই সময় সতর্কতা কমানো একদমই ঠিক নয়৷ তা হলে সেই খুশি দুঃখে পরিণত হতে পারে৷ দো গজ কি দূরি, সময় সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা ভুলবেন না৷ তাঁর কথায়, ‘‘যব তাক দাবাই নেহি, তাব তক ঢিলাই নেহি৷’’