নয়াদিল্লি: ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি রুখতে এবার গোটা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ টানা ২১ দিন লকডাউন ঘোষণা করেছেন তিনি৷ আজ রাত ১২টা থেকে দেশজুড়ে লকডাউন কার্যকর করা হবে৷ অন্তত তিন সপ্তাহের জন্য এই লকডাউন চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিধি কার্যকর থাকবে৷ করোনা মোকাবিলায় লকডাউন একমাত্র উপায় বলে আগেই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ করোনা রুখতে একাধিক দেশ এই পথেই হেটেছে৷ এবার ভারতও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেখানো পথেই হাঁটল৷ কিন্তু দেশে টানা ২১ দিন লকডাউনের ঘটনা সেই ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷
ভারতে তিন তিন বার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল৷ প্রথমে ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় এক্সটার্নাল এমারজেন্সি বা বৈদেশিক জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল৷ ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এক্সটার্নাল জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল৷ এরপর ভারতীয় রাজনীতিতে ঘটে গিয়েছিল আরও একটি অধ্যায়৷
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্যরাত থেকে ২১ মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত টানা ২১ মাস ভারতের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ৷ এই ঘোষণার পিছনে পরামর্শদাতা ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ ভারতীয় সংবিধানে ৩৫২ নম্বর ধারা বলে তখন জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল৷ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রিক ব্যবস্থায় ওই ঘোষণা বিতর্কিত৷
এই মুহূর্তে সংবিধানের ৩৫২নম্বর ধারা অনুযায়ী ‘অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা’, ‘অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ ও রাজ্যস্তরে জরুরি অবস্থা (৩৫৬ ধারা বলে রাষ্ট্রপতির শাসন) জারি করার সুযোগ রয়েছে৷ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে টানা ২১ মাস জরুরি অবস্থা ছিল সব থেকে বিতর্কিত ও দীর্ঘ সময়ের জন্য৷ নিজের দূর্গ বাঁচাতে সেদিনের জরুরি অবস্থা জারি করার প্রেক্ষাপটটা কমবেশি সবার জানা৷
১৯৭৭ সালের পর থেকে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল৷ ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে ভারত৷ ধীরে ধীরে বিশ্বের পশ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারত৷ সম্প্রতি নাগরিক আইন নিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে উঠলেও দেশের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে খুব একটা প্রভাব পড়েনি৷ কিন্তু, এবার করোনা কোপে পড়তে চলেছে ভারত৷ ২১ দিন দেশ থকমে থাকার প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে পড়তে পারে বলে বলেও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা৷ তবে, মহামারি রুখতে লকডাউন ছাড়া আর অন্যকোনও পথ আপাতত খোলা নেই সরকারের সামনে৷ ফলে, এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে নাগরিক কর্তব্য পালন করা খুবই জরুরি৷