নয়াদিল্লি: চব্বিশের মেগা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। সেই সূত্রে রাজনৈতিক দলগুলি লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিজেদের মতো করে শুরু করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বসে নেই বিজেপিও। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের দলগুলির সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। এনডিএ সাংসদদের মোদীর নির্দেশ, তাঁরা যেন কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিয়ে বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একাংশের পাশাপাশি তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, পুদুচেরি, আন্দামান ও নিকোবরের বিজেপি এবং এনডিএ শিবিরে থাকা দলগুলির সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। বৈঠকে তাঁদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আপনারা যাতে ফাঁদে পড়েন সেই চেষ্টা করবে তারা। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ওদের প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না।” ৩১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এনডিএ-র মোট ৪৩০ জন লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই বিজেপি সূত্রে খবর। প্রথম দুটি বৈঠকে মুসলিম মহিলা সমাজের কাছে তিন তালাক রদের বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি ইউপিএ সরকারের আমলে হওয়া বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা সামনে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রত্যেকটি সংসদ অধিবেশনে দলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। গত সোমবার থেকে সেই বৈঠক ফের শুরু করেছেন তিনি। তবে এবার বিজেপির পাশাপাশি এনডিএ জোটের সাংসদদেরও বৈঠকে ডাকছেন তিনি। দিল্লির মহারাষ্ট্র সদনে সোমবারের সেই বৈঠকে তাঁদের উদ্দেশে মোদী বলেছেন,”পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরুন। নিজেদের নাম ইউপিএ ছেড়ে ‘ইন্ডিয়া’ রাখলেও তাদের দুর্নীতি ঢাকা যাবে না।” গত সোমবার দুটি বৈঠক করেছিলেন মোদী। প্রথমে উত্তরপ্রদেশের কানপুর-বুন্দেলখন্ডের চুয়াল্লিশ জন সাংসদের সঙ্গে মহারাষ্ট্র সদনে বৈঠকের পর সংসদের অ্যানেক্স ভবনে মোদী বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের সাংসদদের সঙ্গে। সেখানেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এনডিএ সাংসদদের আওয়াজ তোলার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর বুধবারের বৈঠকে এনডিএ সাংসদদের প্রতি মোদীর নির্দেশ, কোনও বিতর্কে তাঁরা যেন না জড়ান। সূত্রের খবর, পরের বৈঠক হতে পারে ৮ আগস্ট। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং গোয়ার এনডিএ শিবিরের ৭৬ জন সাংসদের দু’টি দলের সঙ্গে মোদী সেদিন বৈঠক করবেন। ৯ এবং ১০ আগস্ট গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দমন-দিউ এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির এনডিএ সাংসদদের সঙ্গে মোদীর বৈঠক হতে পারে।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করেছে। অন্যদিকে পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই ম্যাজিক সংখ্যা (২৭২) পেরিয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে এনডিএ’র সহযোগী দলগুলির সাংসদদের সমর্থন ছাড়াই বিজেপি অনায়াসে সরকার গঠন করার জায়গায় ছিল। আর গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই তিনশোর গণ্ডি পেরিয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এনডিএ শিবিরের দলগুলিকে সমান মর্যাদা দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারে তারাও শরিক হয়েছে। চলতি বছরে এনডিএ গঠনের পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পাল্টা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এনডিএ জোটের সাংসদদের সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে পরামর্শ দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই লোকসভা নির্বাচনের নয় মাস আগেই লড়াইটা ‘এনডিএ’ বনাম ‘ইন্ডিয়া’ হয়ে উঠল। এই পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধী সাংসদ পদ ফিরে পেলে সেই লড়াইটা যে আরও জমে উঠবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।