কী ভাবে ভাবতে হবে, সেটাই আমাদের শেখাবে নয়া শিক্ষানীতি: মোদী   |  PM Modi Address Conclave On National Education Policy

কী ভাবে ভাবতে হবে, সেটাই আমাদের শেখাবে নয়া শিক্ষানীতি: মোদী   |  PM Modi Address Conclave On National Education Policy

 

নয়াদিল্লি:  ইউজিসি আয়োজিত ‘কনক্লেভ অন ট্রান্সফরমেশনাল রিফর্মস ইন হায়ার এডুকেশন আন্ডার ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এই নীতির পক্ষে সওয়াল করলেন তিনি।

এদিনের সভায় নমো বলেন, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি সংক্রান্ত আজকের কনক্লেভ খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এর থেকে নতুন দিশা তৈরি হবে৷ তিন-চার বছর ধরে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় শিক্ষানীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ সারা দেশে এর ব্যাপক চর্চা চলছে৷ বিভিন্ন স্তরের, ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন, জাতীয় শিক্ষানীতিকে খতিয়ে দেখছেন৷ এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিতর্ক৷ এমন বিতর্ক যত হবে, তত বেশি লাভবান হবে দেশের শিক্ষা৷ জাতীয় শিক্ষানীতি এক তরফা ভাবে চালু করা হয়নি। এর কোথাও পক্ষপাত দুষ্টতা নেই৷

আরও পড়ুন- নতুন ভারতের ভিত্তি এই শিক্ষানীতি, কবিগুরুকে আওড়ে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর  |  PM Modi on NEP

 

দীর্ঘ দিন ধরে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলে আসছিল, তার বদল চাইছিল মানুষ৷ এতদিন পর কাঙ্খিত  শিক্ষানীতি পেয়েছে তাঁরা৷ তবে এই প্রশ্নটা আসা খুবই স্বাভাবিক যে, এত বড় সংস্কার কাগজে কলমে তো করা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এর প্রয়োগ করা হবে কী করে৷ এর জন্য ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন রয়েছে, সকলকে মিলে তা করতে হবে৷  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষাবিদদের পাশে আছি৷ 
তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশেই তাদের শিক্ষানীতিকে নিজেদের লক্ষ্য, নিজেদের জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলে এবং সেই মতো শিক্ষানীতির সংস্কার করে। নিজেদের বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ তৈরি করাই এই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য৷ নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি একুশ শতকের ভারতবর্ষের নতুন ভিত গড়ে তুলবে৷ একুশ শতকের ভারতে যুব সমাজের জন্য যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেই চাহিদাকে মাথায় রেখে দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে, উন্নয়নের নতুন শিখর ছোঁয়ার লক্ষ্যে এই শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে। নার্সারি হোক বা কলেজ পড়ুয়া, তারা সকলেই বিজ্ঞানসম্মতভাবে পড়াশোনা করবে৷ 

আগের শিক্ষানীতিতে ঔৎসুক্য, উৎকর্ষ ও চাহিদার ভারসাম্য রাখার বিষয়টিতে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে কখনও চিকিৎসক, কখনও ইঞ্জিনিয়ার, কখনও আইনজীবী হওয়ার প্রতিযোগিতা চলেছে। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থরক্ষা আমাদের লক্ষ্য। প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষাকে সরিয়ে আনতে হবে৷ আমাদের ছাত্রদের মধ্যে, আমাদের যুব সমাজের মধ্যে জটিল ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ কী ভাবে সম্ভব হবে, যদি আমাদের শিক্ষায় প্যাশনই না থাকে, দর্শনই না থাকে৷ 

নমো আরও বলেন, আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মতিথি৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষা শুধু আমাদের জ্ঞান দান করে না, নিজেদের অস্তিস্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। জাতীয় শিক্ষানীতির বৃহত্তম লক্ষ্য এই চিন্তাভাবনার সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্মার্ট ফোন দিচ্ছে সরকার, জোর অনলাইনে ক্লাসের

 

নয়া শিক্ষানীতিতে যুব সমাজের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। একই কর্মক্ষেত্রে জীবনভর আটকে থাকতে হবে না। স্কুল পাঠ্যক্রমে ১০+২ নীতী ছেড়ে এবার ৫+৩+৩+৪ নীতি আনা হয়েছে৷ আমাদের ছাত্রদের গ্লোবাল সিটিজেন তৈরি করতে হবে৷ সেই সঙ্গে যাতে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না হয়, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ছোটরা মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। তাই এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যার জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের মাতৃভাষাতেই পড়াশোনা করার উপর জোড় দেওয়া হয়েছে৷ 
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, এক দিন যে শিক্ষানীতি চালু ছিল তাতে শেখানো হত, ‘আমরা কী ভাবব?’ কিন্তু নয়া শিক্ষা নীতিতে শেখানো হবে ‘কী ভাবে ভাবব?’ জোর দেওয়া হয়েছে অনুসন্ধান, আলোচনা এবং বিশ্লেষণ নির্ভর শিক্ষার উপর। এখন হাতের মুঠোয় সমস্ত তথ্য রয়েছে৷ আমাদের এটা বুঝতে হবে কোন তথ্যটা আমাদের জানতে হবে৷ নয়া শিক্ষানীতিতে এই চেষ্টাই করা হয়েছে৷ একাধিক বইয়ের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ জোর দেওয়া হয়েছে অনুসন্ধান, আলোচনা এবং বিশ্লেষণ নির্ভর শিক্ষার উপর।

আরও পড়ুন- ক্লাসরুমের গভীর বৈষম্য দূর করত ব্যর্থ কেন্দ্রের নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি

 

অনেক সময় চাকরি করতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারেন, তাঁরা এতদিন যা পড়ে এসেছে চাকরি ক্ষেত্রে তার কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই৷ আবার  অনেক ছাত্রকে মাঝপথে পড়া ছেড়ে চাকরি বা অন্য কাজ শুরু করতে হয়৷ এর জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ও এগজিটের সুবিধা আনা হয়েছে৷ একটি পাঠক্রম মাঝপথে ছেড়ে কোনও পড়ুয়া যদি অন্য পাঠক্রমে যেতে চায়, নতুন ব্যবস্থায় তা আরও সহজ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বাড়তি ক্ষমতা পাবে নয়া নীতিতে৷ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বশাসন নিয়ে দু’টি মত রয়েছে। এক দল বলে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। অপর দল পুরোপুরি স্বশাসনের পক্ষে। প্রকৃত শিক্ষার পথ এই দু’টি মতের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে। নয়া শিক্ষানীতির জন্য শিক্ষকদেরও দক্ষমতা বৃদ্ধি ও সময়ের সঙ্গে আপগ্রেড হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মোদী৷ 

নতুন শিক্ষানীতিতে প্রযুক্তি ও প্রতিভার মেলবন্ধন ঘটবে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। শুধু সরকারি নির্দেশিকা জারি করে নয়া শিক্ষানীতি কার্যকর করা সম্ভব নয়, তা গ্রহণ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি জরুরি। এই নীতি নয়া শতাব্দীতে আমাদের নতুন দিশানির্দেশ দেবে। নতুন শিক্ষানীতিতে প্রযুক্তি ও প্রতিভার মেলবন্ধন ঘটবে। আরও বেশি করে প্রযুক্তির ব্যবহার করত হবে৷ আমাদের সমাজে যেন উঁচুনীচু ভেদ না থাকে৷ আমরা কৃষককে সামনে থেকে দেখলে, তবেই বুঝতে পারব তাঁরা কতখানি কষ্ট করছে৷ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সম্মান করতে শিখতে হবে৷ একুশ শতকের ভারতের উপর সারা বিশ্বের অনেক আশা হয়েছে৷ এই শিক্ষানীতি সেই আশা পূরণ করে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − seven =