নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ করোনা পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে আরও সতর্ক হওয়ার আর্জি জালান নমো৷ পাশাপাশি দেশবাসীকে এগিয়ে যাওয়ার দাওয়াই দিলেন তিনি৷ বাড়ানো হল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ৷
এদিন বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা বিরোধী লড়াইয়ে আনলক –২ তে আমরা প্রবেশ করছি৷ একইসঙ্গে শুরু হচ্ছে মুশুমও৷ এই সময় সর্দি-কাশির প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়৷ এই অবস্থায় দেশবাসীর কাছে তাঁর অনুরোধ, নিজেদের খেয়াল রাখুন৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনায় পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ সঠিক সময়ে লকডাউন ঘোষণা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আনলক ওয়ান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে মানুষ অসতর্ক হয়ে পড়ছে৷ প্রথমে মাস্ক, হাত ধোওয়া কিংবা দু’গজের দূরত্ব নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক ছিলাম আমরা৷ আজ যখন আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তখন বাড়ছে অসতর্কতা৷ যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়৷ সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং দেশের নাগরিকদের আগের মতোই সতর্ক হতে হবে৷ বিশেষ করে কনটেনমেন্ট জোনগুলির উপর নজর দিতে হবে৷ যাঁরা নিয়মের পালন করছেন না তাঁদের থামাতে হবে এবং বোঝাতে হবে৷
প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর ১৩ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল৷ কারণ উনি মাস্ক না পরেই বাইরে চলে গিয়েছিলেন৷ ভারতেও স্থানীয় প্রশাসনকেও একই রকম উদ্যমে কাজ করতে হবে৷ এটা ১৩০ কোটি দেশবাসীর জীবন রক্ষা করার অভিযান৷ গ্রামের প্রধান হোক বা দেশের প্রধান কেউই নিয়মের উপরে নয়৷
নমো আরও বলেন, লকডাউনে এমন একটা দিনও আসেনি যে, গরিবের ঘরে উনুন জ্বলেনি৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই সাহায্য করেছেন৷ কোনও মানুষ খালি পেটে ঘুমায়নি৷ লকডাউন শুরু হতেই কেন্দ্র সরকার গরিব কল্যাণ যোজনা নিয়ে এসেছিল৷ এই প্রকল্পে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়৷ গত তিন মাসে ২০ কোটি গরিব মানুষের জনধন অ্যাকাউন্টে ৩১ হাজার কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে৷ ৯ কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে৷ এছাড়াও গ্রামে শ্রমিকদের কাজ দিতে প্রধানমন্ত্রী গরিব রোজগার অভিযান প্রকল্প শুরু করা হয়েছে৷ এর জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷
করোনা যুদ্ধের মাঝেই ৮০ কোটিরও বেশি ভারতীয়কে তিন মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল বা গম এবং ১ কেজি ডাল হয়েছে৷ আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেওয়া হবে৷ এর জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের৷ জুলাই থেকে ধীরে ধীরে উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যায়৷ পরপর অনেক উৎসব আসছে৷ উৎসবের সময় প্রয়োজনীয়তাও বাড়ে, খরচও বাড়ে৷ সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা দিওয়ালি ও ছট পুজো পর্যন্ত করে দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই সুবিধা মিলবে৷ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে এই প্রকল্পের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের৷ এর সঙ্গে আগের তিন মাসের খরচ জুড়লে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে৷
সারা দেশের জন্য এক রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন কার্ড’-এর ব্যবস্থার মাধ্যমে উপকৃত হবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষের জন্য যে অন্ন জোগাতে পারছি এর কৃতিত্ব দেশের মেহনতি কৃষক ও দেশের কোটি কোটি সৎ করদাতাদের৷ সব করদাতাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান মোদি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে আমরা গরিব, শোষিত, বঞ্চিতদের ক্ষমতা বাড়াতে আরও কাজ বেশি করে কাজ করব৷ আগামী দিনে অর্থনৈতিক কার্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ দিন রাত এক করে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলা হবে৷ লোকালের জন্য আমরা ভোকাল হতে হবে৷ যৌথভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷