নয়াদিল্লি: বিশ্ব বাজারে কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম৷ কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম হলেও ব্যতিক্রমী ভারত৷ লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম৷ এই নিয়ে টানা ১৯ দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম৷ আর তার জেরে চরমে উঠেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা৷
আজও আরও মহার্ঘ পেট্রোল-ডিজেলের দাম৷ কলকাতায় পেট্রোলের দাম আরও এক দফায় ১৮ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা ৪৫ পয়সা৷ ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৪৯ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ টাকা ৬৩ পয়সা৷ গত ১৭ দিনে মধ্যবিত্ত জনতার বিপাকে ফেলে পেট্রোলে লিটার প্রতি দাম বেড়েছে ৮ টাকা ১৫ পয়সা৷ ডিজেলের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ১ পয়সা৷ আর তাতেই মাথায় হাত মধ্যবিত্ত জনতার৷ টানা ১৯ দিন যে হারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষ মহলের একাংশ৷
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ সালের এপ্রিল মাস থেকে ১৫ দিন অন্তর পেট্রোল-ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হত৷ মোদি সরকারের আমলে সেই নীতি বদল ঘটানো হয়৷ এখন প্রতিদিন দর ঘোষণা করা হয়ে থাকে৷ হিসেব বলছে, ২০০২ সালের পর ১৫ দিনের ব্যবধানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ২০২০ সালের জুনে রেকর্ড৷ আর গত ২১ মাসে পেট্রলের দাম এখন সর্বোচ্চ৷ বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিশ্ব বাজারে অপরিচিত তেলের দাম সর্বাধিক বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ব্যারেল প্রতি ৮৬.৩ ডলার৷ বাংলায় সেই সময় পেট্রোলের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যারেল পিছু অপরিশোধিত তেলের দাম ৩৮ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে থাকলেও ২০১৮ সালের বর্ধিত তেলের দামের দিকে ঝুঁকছে ভারতীয় বাজার৷
গত ২০১৪ সালের মে মাসে পেট্রোলের দাম ছিল ৭১.৪১ টাকা৷ ওই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল পিছু অপরিশোধিত তেলের দর ছিল ১০৬.৮৫ ডলার৷ ১০৬ ডলারের অনুপাতে বাজারে তেলের দাম ৭১ টাকা হলেও এখন তার উল্টো ছবি ধরা পড়েছে৷ পেট্রোলের দর ৮২ টাকা ছুঁতে চলেছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে এখন দর প্রায় ৪০ ডলার! কিন্তু, কেন এত সমস্যা? আসলে গত দেড় মাসের মধ্যে দু’বার কেন্দ্র সরকার জনতার উপর শুল্ক চাপিয়ে মুনাফা আদায় করতে শুরু করেছে৷ বহু রাজ্য তার উপর বিক্রয়কর বসিয়েছে৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লাভবান হচ্ছে রাজ্য৷ আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷
জানেন কি, সরকারের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য আপনার পকেট থেকে ঠিক কত টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বর্ধিত জ্বালানির নামে? করোনা আহবে গত ১৪ মার্চ পেট্রল ও ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক ৩ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার৷ ফের ৬ মে পেট্রলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা ও ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা শুল্ক চাপানো হয়েছে৷ আর তার জেরে এখন জ্বালানি তেলার উপর ৬৯ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷ যা বিশ্বের হিসাবে রেকর্ড৷ পরিসংখ্যান বলছে গত মার্চ থেকে টানা ৮২ দিন জ্বালানির দাম ঘোষণা বন্ধ রাখে কেন্দ্র৷ এরপর আনলক ওয়ান পর্ব থেকে নতুন করে তেলার দাম ঘোষণা শুরু হতেই ফের চড়তে শুরু করেছে দাম৷ দাম বাড়িয়ে শুধু জ্বালানি থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে কেন্দ্র৷ কেন্দ্র-রাজ্যের আয় বৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷