আমদাবাদ: মানবিকতা আজও মরেনি৷ তাই তো বাঁচল ৫ মাসের ছোট্ট শিশুটি৷ মানুষ আজও মানুষের পাশে দাঁড়ায় বলেই তো সব আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, যায় না৷
একটা ইঞ্জেকশনই পারত সদ্যোজাত শিশুটিকে বাঁচাতে। সে আর কী এমন ব্যাপার! কিন্তু পিলে চমকে যায় সেই মহৌষধির দাম শুনলে! ১৬ কোটি টাকা! এই জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন জোগাড় করা সম্ভব হলে, তবে নিস্তার মিলবে সেই বিরল অসুখ থেকে৷ বাঁচবে দুধের শিশুর প্রাণ৷ চিকিৎসকদের কাছ থেকে খরচের কথা শুনে স্বভাবতই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন ৫ মাসের শিশুটির বাবা-মা। অন্ধকার দেখেছিলেন দু’ চোখে৷ মনে হয়েছিল, সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ এই বিপুল অর্থের নামমাত্র অংশ জোগাড় করাই যেখানে অসম্ভব, সেখানে চোখের সামনেই দেখতে হবে তিলে তিলে মরে যাচ্ছে ছেলেটা৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি৷ অকল্পনীয় ভাবে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ। প্রত্যেকের সামান্য দানে ভর করেই জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে ওই বিপুল অর্থ। নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে ছোট্ট শিশুটি।
ঠিক কী অসুখ হয়েছিল আমদাবাদের শিশুটির? জানা গিয়েছে, জন্ম থেকেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ-১ নামক একটি নিউরোমাসকুলার রোগে আক্রান্ত শিশুটি। অত্যন্ত বিরল জিনঘটিত এই রোগ বিশ্বের প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ১ জনের হয়। এই অসুখের ফলে শিশুটি তার শরীরের কোনও অঙ্গই নাড়াতে পারত না৷ আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে গেলে বিশল্যকরণী একমাত্র ওই ইঞ্জেকশন। আসলে, এই বিরল রোগে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের শরীরে এসএমএন১ জিনটি থাকে না। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেটিই তাদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই শরীরের সব পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ মার্কিন সংস্থা অ্যাভেক্সিসের তৈরি করা ওষুধটি মাত্র বছরদুয়েক আগে ছাড়পত্র পায় আমেরিকায়। পরে ব্রিটেনও ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়৷ সেই মহামূল্যবান ওষুধেরই দাম ১৬ কোটি টাকা।
শিশুটির বাবা রাজদীপ সিং রাঠোর জানিয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের যা কিছু আছে সব বিক্রি করেও, সব সঞ্চয় ব্যবহার করেও ওই বিপুল অর্থের সংস্থান হবে না৷ এই অবস্থায় তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায় ‘ইমপ্যাক্ট গুরু’র মতো গণ-তহবিল সংগ্রহকারী সংস্থা। মাত্র ৪২ দিনে ২.৬ লক্ষ সাধারণ মানুষের অনুদান মিলিয়ে উঠে আসে ওই পর্বতপ্রমাণ অর্থ৷ সকলের সম্মিলিত চেষ্টাতেই নবজীবন পেল পাঁচ মাসের শিশুটি৷