মুম্বই: ‘হয়ে গেল হাঁসজারু, কেমনে তার জানি না’৷ মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন পর্ব ‘আবোল তাবোলে’র থেকে কম কিসের? সূর্যের আলো ফুটলেই ক্ষমতায় আসার প্রহর গুনছিল কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা জোট৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য তৈরি ছিলেন সেনাপ্রধান উদ্ধব ঠাকরে৷ কিন্তু সব সমীকরণে গোলমাল হয়ে গেল যখধ সকাল সাড়ে ছ’টায় যখন ফোন বেজে উঠল৷ ফোনের এপার থেকে প্রথম খবরটা পেলেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার৷ খবর পেলেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির বাসভবনে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ তারপরেই সবাইকে রীতিমত হতবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য মহারাষ্ট্রের মসনদে বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশের আগমন৷
উপমুখ্যমন্ত্রীর আসনে শপথ নিয়েছেন এনসিপি বিধায়ক দলের নেতা অজিত পাওয়ার অর্থাৎ শরদ পাওয়ারের ভাতুষ্পুত্র৷ জোটের এই উল্টো পুরাণে একমাত্র চক্রান্তকারী হিসেবে তার কথাই বলছে তার নিজের দল থেকে শুরু করে জোট দলের সদস্যরাও৷
ইতিমধ্যেই এনসিপি-র পরিষদীয় দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে অজিত পাওয়ারকে৷ তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে৷ তার জায়গায় দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে জয়ন্ত পাতিলকে৷
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট৷ শপথ গ্রহনের রাজ্যপালের সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জোট৷ সেক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের আগে আগে রাজভবনের একদিনের রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছে আরটিভি৷
পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিধানসভায় নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করুক দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকার৷ শীর্ষ আদালতের কাছে পিটিশনে এমনটাই দাবি জানিয়েছে জোট৷ রবিবার এই পিটিশনের শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত৷ রবিবার ফের বৈঠকে বসছেন জোট দলের বিধায়করা৷ এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দাবি দলের ৫১ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে আছেন৷ সেক্ষেত্রে কার্যতই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেনা বিজেপি৷
জোট থেকে বেড়িয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এনসিপির পরীষদীয় দলের নেতা অজিত পাওয়ার স্বভাবতই পুরো ঘটনায় মূল দায়ভার এখন দলের ওপরেই৷ সকালেই সেনা-এনসিপি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ভাইপো অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন- ‘‘অজিত পাওয়ার ছাড়া এনসিপির অন্য বিধায়কদের কেউই এই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি৷
শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট এখনও সক্রিয় রয়েছে৷ নির্বাচিত সমস্ত বিধায়ক এই জোটকেই সমর্থন করছেন৷ এনসিপির কোনও প্রকৃত সদস্য বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে না৷’’ শরদ পাওয়ার আরও বলেন, ‘‘আমরা শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকারই চাই এবং আমরা এর জন্য একজোট হয়ে থাকব৷’’ শরদ কন্যা সুপ্রিয়া সুরে হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে লিখেছেন, ‘‘দল ও পরিবারে ভাঙন ধরল৷’’
এদিকে এনসিপি নেতা নবাব মালিক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছেন বিধানসভায় স্পিকার নির্বাচনেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হবে৷ আবার ক্ষমতায় ফিরবে কংগ্রেস-শিবসেনা-এনসিপি জোট৷ গত এপ্রিলেই এক জনসভায় এনসিপি দলের প্রধান শরদ পাওয়ারে পারিবারিক ভাঙনের কথা উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এই ভাঙনের প্রভাব যে দলের উপরেও পড়তে পারে তারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ শনিবারের ঘটনা তার সেই ভবিষ্যতবাণীকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ তবে রবিবার ছুটির দিনেও মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন নিয়ে দিনভর চলবে জোট দল, ক্ষমতাসীন দলগুলির বৈঠক,সুপ্রিম কোর্টের শুনানি৷ কার্যত মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে দিনভর সরগরম থাকবে মহারাষ্ট্র তথা গোটা দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্র৷