কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বনধ-প্রতিবাদ! সমর্থন বিরোধী দলগুলির

কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বনধ-প্রতিবাদ! সমর্থন বিরোধী দলগুলির

নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বনধ্, প্রতিবাদ, বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল গোটা দেশ। কৃষকদের ডাকা বনধে সমর্থন করেছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি, ফলে বনধেরক প্রভাবে সারা পড়েছে ভালই। যদিও ক্ষেত্র বিশেষ পরিষেবা খোলা ছিল। রাজধানী দিল্লিতে মেট্রো চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পাশাপাশি অটো ও ট্যাক্সি চলাচলও করেছে স্বাভাবিক ছন্দেই। তাদের ইউনিয়নের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়, যেহেতু অতিমারী পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে, ফলে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও বনধ পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দিল্লিতে ব্যবসায়ী ও আইনজীবীরা হাতে কালো কাপড় বেঁদে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

বনধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানায়। কৃষক আন্দোলনের সিংভাগ জুড়ে রয়েছেন দুই রাজ্যের কৃষকরা। এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বনধের সমর্থনে পঞ্জাব ও হরিয়ানার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। বিদ্রোহী কৃষকদের ডাকা বনধকে সমর্থন করে তাঁদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। ফলে বেশিরভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ছিল বন্ধ। দোকানবাজারের বেশিরভাগেই তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। পঞ্জাবে বন্ধ ছিল সরকারি ও বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে বনধের দিনে পঞ্জাব কার্যত ছিল শুনশান। পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাটে লোকজনের সংখ্যাও ছিল কম। হরিয়ানায় ব্যাহত হয় আন্তঃরাজ্য ও অন্তঃরাজ্য যান চলাচল। শিবসেনা-কংগ্রেস শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্রেও বনধের প্রভাব পড়েছে। মুম্বই ও নভি মুম্বইয়ের গুরুদুয়ারের কর্মীরা মানখুর্দ সংলগ্ন সিওন-পানভেলে জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ দেখান শিখ কৃষকরা। এদিকে, শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই নয়, দেশের সুদুর মার্কিন মুলুক থেকেও কৃষকদের বিক্ষোভে সমর্থন মিলেছে। কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রবাসী শিখ সম্প্রদায় ও বিশিষ্ট প্রবাসী মার্কিন নাগরিকরা।

বনধের দিনেই আম আদমি পার্টির তরফে দাবি করা হয়েছে, গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। সোমবার দিল্লি সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করার পর থেকেই তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে দাবি আপের। অন্যদিকে, দিল্লির শাসকদলের তরফে তোলা এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। কৃষকদের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী ধরনায় বসতে পারেন, এই ভয় পেয়েই এমনটা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা দলের শীর্ষ নেতা মনীশ সিসোদিয়া। এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করার অভিযোগ তুলে তাঁর বাড়ির সামনে ধরনায় বসেন উপমুখ্যমন্ত্রী। সিসোদিয়া বলেন, বিজেপি ভয় পেয়েছে যে, কৃষকদের পক্ষে ডাকা বনধজের সমর্থনে ধরনায় বসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী, এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কৃষকদের আচরণে বিজেপি হতবাক হয়ে গিয়েছে।

দিল্লি সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকরা এদিন আবার নয়া দাবি তুলেছেন। পঞ্জাব কিষাণ মোর্চার তরফে মঙ্গলবার দাবি তোলা হয়েছে, দিল্লির রামলীলা ময়দানে তাদের বিক্ষোভের অনুমতি দিতে হবে। স্পষ্টতই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, তারজন্য দিল্লি ও হরিয়ানার দৈনন্দিন জীবনে কোনও প্রভাব ফেলা হবে না। এদিন বিকেলে সিঙ্ঘন সীমানায় একটি সাংবাদিক বিবৃতিতে পঞ্জাব কিষাণ ইউনিয়নের সভাপতি আরএস মানসা বলেন, “দিল্লি বা হরিয়ানার কোনও মানুষের আমরা ব্যাঘাতের কারণ হতে চাই না, আমাদের রামলীলা ময়দানে বিক্ষোভের অনুমতি দিতে হবে।” তাঁর মতে, পঞ্চম দফার বৈঠক হয়ে গিয়েছে, তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের স্বস্তির কোনও বার্তা দিতে পারেনি। মঙ্গলবার টিক্রি সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকদের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত যুবক সোনিপতের বাসিন্দা অজয় মুর, পরিবারের তরফে দেহ সনাক্তকরণের পর এমনটাই এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “খোলা পার্কে ঘুমাচ্ছিলেন মুর। আজ সকালে তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 11 =