লকডাউন: অনলাইন ফুড ডেলিভারি নিয়েও তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি

গত শুক্রবারই ই-কমার্সকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে বলে রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করেছিল কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক, জানিয়েছিল যে এবিষয়ে”কোনো সমস্যা বা বিভ্রান্তি নেই”। যদিও এখন এবিষয়ে আর কিছুই বলতে চাইছে না তাঁরা।

নয়াদিল্লি: দেশের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মঙ্গলবার একদিনেই সোমবার থেকে এপর্যন্ত নতুন ৯৯টি সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯৮। হিমাচল প্রদেশের বিদেশ ফেরত প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯। যদিও এপর্যন্ত ৩৭ জন করোনা আক্রান্তকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে এমন ৭৫ টি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করলেও বিপদের আশঙ্কায় দেশের ৭২৮টি জেলার মধ্যে অন্তত ৬০৬ টি জেলাতেই  কর্যত লকডাউন। করোনা আতঙ্কে দেশজুড়ে যেন কার্ফুর চেহারা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং আইসিএমআর-এর দাবি, লকডাউন কার্যকর করতে পারলে সংক্রমণকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। 

এদিকে দেশজুড়ে লকডাউন পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়েছে ই-কমার্স ও অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করার সময় কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার ও কেন্দ্রীয় উপভোক্তা মন্ত্রক নিশ্চিত করে দিয়েছিল যে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিষেবা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে। সেক্ষেত্রে ছাড় থাকবে অনলাইনে এই ধরণের জিনিসপত্র হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রেও ।

চীনের আলিবাবা গ্রুপের সাহায্যপ্রাপ্ত নিত্যপণ্য সরবরাহকারী বিগবাস্কেট জানিয়েছে নির্দেশ অনুযায়ী জরুরী পরিষেবার ক্ষেত্রে ঠিক কি ধরণের ছাড়ের কথা বলা হয়েছে তার সঠিক ধারণা নেই খোদ প্রশাসনের। ফলে বিভিন্ন শহরে তাদের ডেলিভারি বয়দের কাজে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। 

সংস্থার এক আধিকারিক হরি টি এন, সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন যে ” দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হোক এবং দেশজুড়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিষেবার অনুমতি দিতে অবিলম্বে সরকারকে মধ্যস্থতা করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

জাপানের সফট ব্যাংকের সাহায্য প্রাপ্ত 'গ্রফার্স'এর আধিকারিক আলবিন্দর ধিন্দসা জানিয়েছেন, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই,পুনে এবং নতুন দিল্লিতে জোর করে তাদের লকডাউন মেনে চলতৈ বাধ্য করা হয়েছে। রাজ্যগুলিতে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন অ্যামাজন, ওয়াল মার্টের ফ্লিপকার্ট ও সফট ব্যাংকের সাহায্য প্রাপ্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইট স্ন্যাপডিলের। এই লককডাউনের পরিধি সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই তাদের কাছে, এমনটাই দাবি করেছেন সংস্থার আধিকারিকেরা। ফ্লিপকার্ট-এর মতে “রাস্তায় নেমে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে” এবং তা সমাধানের জন্য সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনা করছে। স্নাপডিল-এর বক্তব্য, যে কেন্দ্র থেকে বিষয়টি সমানভাবে কার্যকর করলে তবেই ক্রেতাদের সমস্যা কমানো সম্ভব হবে।

আমাজোন জানিয়েছে যে নিরাপদে ও নির্ঝঞ্ঝাটে সাধারণ মানুষের বাড়িতে জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করছে তারা। গত শুক্রবারই ই-কমার্সকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে বলে রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করেছিল কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক, জানিয়েছিল যে এবিষয়ে”কোনো সমস্যা বা বিভ্রান্তি নেই”। যদিও এখন এবিষয়ে আর কিছুই বলতে চাইছে না তাঁরা।

এদিকে দিল্লির সংবাদপত্রগুলির প্রথম পাতায় বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে যে লকডাউনের জন্য সমস্ত পরিবহন বন্ধ থাকলেও অত্যাবশ্যকীয় পন্য পরিষেবার জন্য ই-কমার্সকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আবার মুম্বাইয়ের এক আধিকারিকও জানিয়েছেন যে, সেখানেও  অত্যাবশ্যকীয় পন্যসামগ্রী হোম ডেলিভারি দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। সবমিলিয়ে এই দুর্দিনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে না পেরে যেমন ক্ষুব্ধ অনলাইন সংস্থাগুলি তেমনই প্রয়জনীয় জিনিস অর্ডির দিয়ে সময়মতো হাতৈ না পাওয়ায় অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =