শ্রমিকদের ফ্রি রেশন, হকারদের জন্য ঋণ, স্থগিত কৃষিঋণ, ‘কল্পতরু’ নির্মলা!

শ্রমিকদের ফ্রি রেশন, হকারদের জন্য ঋণ, স্থগিত কৃষিঋণ, ‘কল্পতরু’ নির্মলা!

b1b9fe19fe5f906971fddb5fd93464eb

নয়াদিল্লি: আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষে কেন্দ্রের প্যাকেজ নিয়ে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সাংবাদিক বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী জানান, আজ  ৯টি পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে৷ এর মধ্যে তিনটি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে, একটি আদিবাসীদের কর্মসংস্থান নিয়ে, দু’টি পদক্ষেপ কৃষকদের নিয়ে, একটি স্ট্রিট হকার ও দু’টি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে৷

নির্মলা সীতারমন বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যান যোজনা শুরু করা হয়েছিল৷ গরিবদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে৷ এর পরেও যে প্রয়োজন রয়েছে, তা মেটাতে নতুন করে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র৷ তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তিন কোটি প্রান্তিক কৃষককে ৪ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। কৃষি ঋণে তিন মাসের মোরাটোরিয়ামও ঘোষণা করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে গত দু’মাসে ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য ২৫ লক্ষ নতুন কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে।

সাতারমন বলেন, গতকাল ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে উপকৃত হবেন দেশের ১২ কোটি মানুষ। সরকার হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ প্রথম থেকেই দেশের গরিব মানুষের পাশে রয়েছে মোদি সরকার৷ যে গরিব মানুষরা কোনও দিন বিমা করানোর কথা চিন্তা পর্যন্ত করতে পারতেন না, আজ তাঁদের বিমা আছে৷ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে৷ সরাসরি সেই অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছে সরকার৷ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর গত দুই মাসে ৬৩ লক্ষ ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে৷ ৮৬, ৬০০ কোটি টাকার লোন কৃষকদের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে৷ গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে ৪,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয়ের জন্য রাজ্যের সংস্থাগুলিকে ৬,৭০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ যা ঘুর পথে কৃষকদের হাতেই পৌঁছেছে৷ 

নাবার্ডের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার আপৎকালীন তহবিলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছোট ও প্রান্তিক চাষীদের কৃষি ঋণ দিতে এই টাকা ব্যবহার করা হবে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও জেলা সমবায় ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হবে। এর ফলে ৩ কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী উপকৃত হবেন। পরিযায়ী শ্রমিক এবং শহরের গিরব মানুষদের প্রতি একইভাবে দায়িত্বশীল সরকার। পরিযায়ী শ্রমিক এবং শহরের গরিব মানুষদের জন্য স্টেট ডিজাস্টার ফান্ডে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শহরের গৃহহীনদের জন্য শেল্টার তৈরি হয়েছে৷ এই শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের তিন বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এবং সেই টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ 

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে ভারত৷ সেরা দেশে প্রায় ১২ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই ৩ কোটি মাস্ক উৎপাদন করেছে৷ এছাড়াও ১ লক্ষ ২০ হাজার লিটার স্যানিটাইজার তৈরি করেছে তাঁরা৷ এই সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ‘পয়সা’ পোর্টালের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে৷ প্রথমে গুজরাতে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল৷ ধীরে ধীরে তা অন্যান্য রাজ্যেও চালু করা হচ্ছে৷ করোনা সংকটের মধ্যেই শহরাঞ্চলে নতুন করে ৭ হাজারেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে৷ তাঁরাও সরকারি সাহায্য পেয়েছেন৷ 

পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে৷ তাঁদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে চিন্তিত কেন্দ্র৷ পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজ রাজ্যে ফেরার পর যাতে একশো দিনের কাজে যোগ দিতে পারেন, তা দেখার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে বলা হয়েছে৷ এই প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের এই ক’মাসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর্মদিবস বাড়ানো হয়েছে৷ ১৩ মে পর্যন্ত ১৪.৬২ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে৷ ২.৩৩ কোটি মানুষ ১ লক্ষ ৮৭ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করছেন। ১০০ দিনের কাজে মজুরিও ১৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়েছে৷ এর জন্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ 

১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক মজুরি আলাদা হওয়ায় একটা সমস্যা রয়েছে৷ সেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ শ্রম আইন সংস্কারের বিষয়টি সংসদের বিবেচনায় রয়েছে। ন্যূনতম মজুরি সব শ্রমিকরা যাতে পায় সে ব্যাপারে সরকার প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ ন্যূনতম মজুরি সার্বজনীন করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। ন্যূনতম মজুরির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে জাতীয় স্তরে ফ্লোর রেট স্থির করতে চাইছে কেন্দ্র।

বলা হয়েছে, শ্রমিকদের নিয়োগ করলে নিয়োগ পত্র দিতেই হবে। বছরে অন্তত একবার তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে। পাশাপাশি কোনও সংস্থায় মহিলাদের রাতে কাজ করানো হলে, তাঁদের নিরাপত্তার পুরো ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য ইএসআই-এর ব্যবস্থা করতে হবে৷ এমনকী যে সকল সংস্থায় ১০ জনের কম কর্মী আছেন, তাঁদেরও ইএসআই-এর আওতায় আনা হবে৷ যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে৷ 

আগামী দু’মাস পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে৷ যাঁদের রেশন কার্ড নেই, তাঁরাও এবার থেকে মাথাপিছু ৫ কেজি করে খাদ্যসামগ্রী পাবেন৷ মাথাপিছু ৫ কেজি চাল বা গম এবং ১ কেজি ডাল দেওয়া হবে তাঁদের৷ সরকারি হিসেবে প্রায় ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন৷ এর জন্য সরকারের খরচ হবে ৩,৫০০ কোটি টাকা৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন কার্ড’ চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই রেশন কার্ড থাকলে দেশের যে কোনও প্রান্তের রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যাবে৷ অগাস্ট থেকেই মিলবে এই সুবিধা৷ ফলে এবার থেকে যে কোনও রাজ্য থেকেই রেশন তুলতে পারবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা৷  

পরিযায়ী শ্রমিক এবং শহরের গবির মানুষরা যাতে কম টাকায় ঘর ভাড়া পান, সেই ব্যবস্থাও করতে  চলেছে সরকার৷ ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় ঘর তৈরি হবে, পরিযায়ী শ্রমিকরা সেখানে কম ভাড়ায় থাকতে পারবেন৷ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অনেক আবাসনকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে৷ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে এই বাড়িগুলি তৈরি করা হবে৷ রাজ্যের শ্রমিকরাও সেখানে ভাড়া থাকতে পারবে৷ ‘মুদ্রা শিশু ঋণ’ এর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে৷ এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে উপকৃত হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ৷  মুদ্রা শিশু ঋণ যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের প্রদেয় সুদের উপর ২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। এ জন্য সরকারের খরচ হবে দেড় হাজার কোটি টাকা।

সারা দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ স্ট্রিট হকার আছেন৷ সেই সকল হকার, ঠেলাওয়ালা, ফুটপাতের দোকানদারদের জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ লকডাউনে তাঁরা কোনও উপার্জন করতে পারেনি৷ এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কথা ভেবে ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে৷ অর্থমন্ত্রী জানান, এই সব শ্রমিকরা ডিজিটাল পেমেন্ট করলে বাড়তি কিছু সুবিধা পাবেন৷ ৬ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের বার্ষিক আয়, তাঁদের গৃহ নির্মাণের জন্য ক্রেডিট লিঙ্ক সাবসিডি স্কিমের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত করা হল। ২০২০ সালের মার্চেই এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল, তার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হচ্ছে৷ এই প্রকল্পে ৩ লক্ষ ২০ হাজার পরিবার সুবিধা পাবেন৷  

আদিবাসীদের কর্মসংস্থান, বনসৃজন, পতিত জমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদির জন্য ৬০০০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছে। যা অবিলম্বে কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই প্রকল্পগুলিকে ১০ দিনের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *