নয়াদিল্লি: অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা তাঁর৷ ছোট্ট একটা সাইকেল সারাইয়ের দোকান চালাতেন বাবা৷ তা দিয়েই কোনও মতে চলত সংসার৷ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি৷ ফলে জীবনে চলার পথে বারবার প্রতিবন্ধকতা এসেছে৷ কিন্তু কোনও ঝড়ই তাঁর পথ রুখতে পারেনি৷ তিনি এগিয়ে গিয়েছেন দুর্বার গতিতে৷ আজ দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা তিনি৷
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নিয়ে মমতার সঙ্গে একমত যশবন্ত, একহাত নিলেন কেন্দ্রকে
এই তরুণের নাম বরুণ বরনওয়ালা। মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার ছোট্ট শহর বইসারের বাসিন্দা। ছোট থেকেই বরুণ স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। গরিব মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু সযত্নে সাজানো তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে বরুণ থেমে থাকেননি। অন্য লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি আজ দেশের একজন আমলা।
বরুণের জীবন সফর একেবেরে মসৃণ ছিল না। তবে ভরসা ছিল মেধায়৷ ছোট থেকেই মেধাবী বরুণ৷ কিন্ত, বরুণ যখন দশম শ্রেণির ছাত্র, তখন হঠাৎই মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। আচমকা ঝড়ে ভেঙে পড়ে তাঁদের সংসার৷ জীবনে যেন আধার নেমে আসে৷ কী ভাবে সংসার চলবে তা ভেবেই তখন দিশাহারা বরুণের মা৷ সেই কঠিন পরিস্থিতিতে সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নেন ছোট্ট ছেলেটা। সংসার চালাতে বাবার সাইকেলের দোকানে বসা শুরু করেন তিনি৷ ঠিক করেন, আর পড়াশোনা করবেন না৷
ছেলের কী ভাবছে, সেটা আন্দাজ করে ফেলেছিলেন তাঁর মা৷ তিনি একেবারেই চাননি ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হোক৷ বরুণকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন তিনি। তাই ছেলের বদলে নিজেই দোকানে বসা শুরু করেন।
ইতিমধ্যেই দশমের বোর্ড পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তাতে প্রথম হন বরুণ। কিন্তু বাবার আচমকা মৃত্যু তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। সেই সময় ছেলেকে সমানে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মা। পড়াশোনার ফাঁকে বাবার সাইকেলের দোকানও বসতেন বরুণ। আর তাঁর দিদি দিনরাত টিউশন পড়াতেন। এ ভাবেই চলছিল সংসার।
জীবনে কী করবেন, তা নিয়ে বরুণ যখন দিশেহারা, তখন ত্রাতা হয়ে হাজির হলেন তাঁর বাবার এক বন্ধু, চিকিৎসক কাম্পলি। ১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে বরুণকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন তিনি। কিন্তু, ডাক্তারি পড়ার বিপুল খরচ কোনও ভাবেই তাঁদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, এটা বুঝেই মাঝপথে মেডিক্যালের পড়া ছেড়ে দেন। অধরাই থেকে যায় বরুণের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন৷
তবে তিনি থেমে যাননি। ভর্তি হন পুণের এমআইটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে৷ কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন বরুণের বন্ধুরা। প্রথম সিমেস্টারে কলেজের মধ্যে প্রথম হওয়ায় স্কলারশিপ পান বরুণ। সেই স্কলারশিপের টাকা দিয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন তিনি৷ তাঁর জীববের এই কঠিন সময়ের পাশে পেয়েছিলেন তাঁর বন্ধুদের। বই কেনা থেকে টিউশন খরচ, সবটাই দিয়েছিলেন তাঁরা।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি নেনে বরুণ। চাকরি করতে করতেই ঠিক করেন ইউপিএসি পরীক্ষায় বসবেন। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্তে সায় ছিল না পরিবারের৷ তাঁর চাইছিলেন বরুণ ওই আন্তর্জাতিক সংস্থাতেই কাজ করুন। কিন্তু নিজের মনের কথা শুনেছিলেন তিনি৷
একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ইউপিএসসি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন৷ ওই সংস্থাই তাঁকে ইউপিএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বই দিয়ে সাহায্য করত। এর পর দিনরাত এক করে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকেন৷ ২০১৬ সালে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হন বরুণ। তাঁর ব়্যাঙ্কিং ছিল ৩২। বর্তমানে গুজরাতে কর্মরত রয়েছেন এই আইএএস অফিসার৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>