নয়াদিল্লি: পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ক্রমাগত চড়ছে উত্তেজনার পারদ৷ সীমান্তে এই উত্তেজনা প্রশমিত করতে দু’দেশের সেনা কমান্ডার স্তরে চলছে দফায় দফায় বৈঠক৷ গালওয়ান উপত্যকার ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টে চলছে আলোচনা৷ গত সোমবার এই অঞ্চলেই চিনা সেনার হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান৷ তবে বারবার দু’দেশের সামরিক কর্তারা আলোচনা টেবিলে বসলেও, এখনও মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র৷
গালওয়ান উপত্যকার ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্ট রয়েছে ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে৷ কিন্তু এই অঞ্চলকে বারবার নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে চলেছে চিন৷ তবে শুধুমাত্র ভারত সীমান্ত নিয়েই সমস্যা তৈরি করেননি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং৷ গালওয়ান উপত্যকা ছাড়াও একাধিক বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে চিনেজুড়ে৷
সম্প্রতি গণতন্ত্র নিয়ে একটি অনলাইন বৈঠকে চিনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেয়ো৷ তিনি বলেন, সমস্ত প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ‘‘দুবৃত্ত’’ আচরণ করছে চিন৷ তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসনকে মোক্ষম জবাব দিতেই গত ১৫ জুন প্রশান্ত মহাসাগরে ৩ লক্ষ টন বিমানবাহী জাহাজ মোতায়েন করেছে আমেরিকা৷
আবার ২০১৭ সালে প্রায় ৭৩ দিন ধরে চলেছিল ডোকলাম বিবাদ। ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ডোকা লা মালভূমি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল ভারত-চিন সীমান্তের উত্তেজনা৷ অভিযোগ ছিল, চিনা সেনা সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বুলডোজার দিয়ে দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়েছে৷ এ ছাড়াও নিজেদের এলাকা না হওয়ার পরেও চিন সেখানে রাস্তা তৈরি চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। সামরিক কৌশলগত কারণে ভারত তা আটকে দিতেই দু’পক্ষ মুখোমুখি হয়৷ পরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়৷
এছাড়াও দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে কোনও কসুর রাখছে না চিন৷ ধীরে ধীরে দক্ষিণ চিন সাগরকে সম্পূর্ণ কব্জা করতে চাইছে বেজিং৷ দক্ষিণ চিন সাগরের উপর চিনের ‘ঐতিহাসিক অধিকার’-এর দাবি তুললেও, ২০১৬ সালে তা খারিজ হয়ে যায়৷ এর পরেও এই অঞ্চলে চিনের সামরিকীকরণের প্রচেষ্টা বন্ধ হয়নি৷ দক্ষিণ চিন সাগরের তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বীপ ও সামুদ্রিক সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে চিনের৷ বিতর্ক রয়েছে স্প্রেটলি দ্বীপপুঞ্জ (ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, তাইওয়ান) সহ পারাসেল দ্বীপপুঞ্জ (ভিয়েতনাম), স্কারবরো শোয়েল (ফিলিপাইন) এবং টঙ্কিন উপসাগরেও (ভিয়েতনাম)৷
হলুদ সাগরে উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে এবং পূর্ব চিন সাগরে চিনের স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এর উপর জাপানের সেনাকাকু এবং দিয়াওয়ে দ্বীপপুঞ্জের উপরেও দাবি জানিয়েছে চিন৷ সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে নেপালের সঙ্গেও৷ নেপালের সার্ভে ডিপার্টমেন্টের অভিযোগ, নেপালি ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে চিন৷ উত্তরের হুমলা, রসুয়া, সিন্ধুপালচোক এবং শঙ্খুওয়াসাবা জেলা দখল করে নিয়েছে চিনা সেনা৷ এই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নেপালি ভূখণ্ডে মাথাচাড়া দিতে থাকে চিন বিরোধী বিক্ষোভ৷ কিন্তু নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি সরকার চিনের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে নতুন মানচিত্র তৈরি করে ফেলেছে৷ নেপালে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে চিন৷ ইতিমধ্যে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের উদ্যোগও নিয়ে ফেলেছে বেজিং৷ এবং এখানে ৫ জি পরিষেবা চালু করতে টেলিযোগাযোগ সক্রান্ত উপকরণও আনতে শুরু করেছে৷ গত মে মাসে টুইট করে মাউন্ট এভারেস্টকে চিনের অংশ বলে দাবি জানিয়েছিল চিনের গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক৷ পরে অবশ্য চাপের মুখে ওই টুইট ডিলিট করে দেওয়া হয়৷