নয়াদিল্লি: বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় আজ আডবাণী-জোশী সহ ৩২ জন অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করেছে লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত৷ রায় ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে৷ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)৷ আজকের দিনটিকে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় কালো দিন বলে অভিহিত করেছেন এআইএমআইএম সুপ্রিমো আসাদুদ্দিন ওয়েইসি৷
আরও পড়ুন- বাবরি রায়েও সরকারের ‘খাঁচা বন্দি তোতা’ হয়েই রইল সিবিআই?
এদিন ওয়েইসি বলেন, ভারতের যেখানেই আডবাণীর রথ গিয়েছে, সেখানেই রক্ত ঝরেছে৷ নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ অথচ আজকের রায়ে বলা হচ্ছে এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল না৷ ‘’কোনও কাজ স্বতঃস্ফূর্ত নয় বলার জন্য ঠিক কতগুলি মাসের প্রস্তুতির প্রয়োজন?’’ প্রশ্ন তুলেছেন ওয়েইসি৷
তিনি বলেন, উমা ভারতী বলেছিলেন, ‘‘এক ধাক্কা ঔর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো৷’’ তাহলে এটা কি উস্কানিমূলক মন্তব্য নয়? বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সময় মিষ্টি বিলি করা হয়েছিল৷ আডবাণী, জোশী, উমা ভারতী সকলেই মিষ্টিমুখ করেছিলেন৷ খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলেন৷ সারা দুনিয়ার মানুষ এটা দেখেছে৷ অথচ আজ তাঁদেরই নির্দোষ প্রমাণিত করা হল৷
আরও পড়ুন- বাবরি রায়ে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড! রায়ে উচ্ছ্বসিত আডবাণী-জোশ
তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই মামলায় আজও সুবিচার পাননি মুসলিমরা৷ আদালতের উচিত ছিল, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করা। তাঁদের শাস্তি দেওয়া৷ কিন্তু এমনই এক রায় ঘোষণা করা হবে, সেটা তাঁরা আশা করেছিলেন৷ কারণ অভিযুক্তদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর পদে দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্যই বিজেপি আজ ক্ষমতায় রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ ফলে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারিগরদের সাজা যে হবে না, তা জানাই ছিল৷
ওয়েইসি আরও বলেন, সিবিআই-এর চার্জশিটে বলা হয়েছিল, ৫ ডিসেম্বর রাতে বিনয় কাটিয়ার বাড়িতে বসে ষড়যন্ত্রের ছক কষেছিলেন আডবাণী৷ মসজিদ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কল্যাণ সিংকে ইস্তফা না দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি৷ এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা স্মরণ করিয়েও ওয়েইসি বলেন, গত বছর ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি বলেছিলেন বাবরি মসজিদ স্পষ্টতই ধ্বংস করা হয়েছিল৷ ‘গুরুতর ভাবে আইন লঙ্ঘিত হয়েছিল৷’’ ‘‘আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে যদি এই ঘটনার ফলে আইনভঙ্গ না হয়ে থাকে তাহলে কি ডিসেম্বরের ৬ তারিখ জাদু বলে মসজিদটি ধ্বংস হয়েছিল? ১৯৪৯ সালের ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর রাতে কি ওখানে জাদুর সাহায্যে মূর্তিগুলি রাখা হয়েছিল? রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন জাদুর সাহায্যে তালা খোলা হয়েছিল?’’ বিজেপি, শিবসেনা, আরএসএস-এর পাশাপাশি এদিন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একহাত নিয়ে এআইএমআইএম সুপ্রিমো বলেন, রাজীব গান্ধীর আমলেই মসজিদের তালা খোলা হয়েছিল৷ শিলান্যাস করা হয়েছিল৷ মসজিদ ধ্বংসের সময়ও ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস৷ আজকের এই দিন ভারতীয় আদালতের কালো দিন৷
আরও পড়ুন- বাবরি মামলার রায়ে কী বললেন ‘বেকসুর’ আডবানী, মুরলী মনোহর জোশী?
এই রায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেসও৷ এদিন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই রায় প্রত্যাশিতই ছিল। এমনই একটা রায় আসবে তা জানতাম৷ এই রায়ে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। তিনি আরও বলেন, বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে বলব, ভারতের ঐক্য সংহতি বিসর্জন দিয়ে যাঁরা ভারতে একটি বিশেষ ধর্মের দেশ বলে চিহ্নিত করতে চান, তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত দল এক হন।