নয়াদিল্লি: সংসদীয় জীবনের সিংহভাগটাই রাজ্যসভার সদস্য হয়ে কাটিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরাসরি জনগণের ভোটে জিততে হয়নি তাঁকে। লোকসভায় পা রাখতেও দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছিল তাঁর৷ অবশেষে ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে জিতে প্রথম লোকসভার সাংসদ হন তিনি। ২০০৯ সালের ভোটেও সেখান থেকেই জয়ী হন৷ কিন্তু সেই মেয়াদ ফুরানোর আগেই ২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর মুকুট ওঠে তাঁর শিয়রে৷
আরও পড়ুন- প্রণব-প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ঢাকুরিয়া, এখান থেকেই তৈরি হয়েছিল বাংলার রাজনীতির রোডম্যাপ
বাঙালির মানসিকায় তিনি যে সংবেদনশীল সংযোগ ঘটিয়ছিলেন, তার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ স্বাভাবিক রাজনীতির দেওয়ানা-নেওয়ার উর্ধ্বে উঠে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বহুত্ববাদ৷ একলা চলো নীতিতে নয়, বিশ্বাস করতেন ‘সবকা সাথ’-এ৷ কলকাতায় মেট্রো নিয়ে এসেছিলেন তাঁর সমসামসিয়ক দাপুটে কংগ্রেস নেতা এবিএ গনি খান চৌধুরী৷ কিন্তু রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হয়ে আপামর বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন ধুতি পরিহিত এই বাঙালি৷ যখন বাংলা নিজেকে বঞ্চিত ভাবছিল, তখন বাংলাকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷
মনমোহন সিংয়ের মতো বিদেশের ডিগ্রি ছিল না তাঁর ঝুলিতে৷ পি চিদাম্বরমের মতো অনর্গল কথা বলতে পারতেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জননেতাও ছিলেন না, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’৷ ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রণববাবু৷ আনুগত্য, দক্ষতা, বিশ্বস্ততায় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে নিজের আসন পাকা করে নিয়েছিলেন৷ জরুরি অবস্থার সময়েও একইভাবে ইন্দিরার আনুগত্য দেখিয়েছিলেন প্রণববাবু৷ ইন্দিরা-অনুগত প্রণবের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার সময় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে শাহ কমিশনেও।
অনেকেই মনে করেন, ২০০৪ ও ২০০৯-এ সনিয়া গান্ধী পর পর দু’বার মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী পদে বেছে নেওয়ায় হয়তো পীড়িত হয়েছিলেন প্রণববাবু৷ তবে কোনও খেদ থাকলেও, তা ছিল অব্যক্ত। মনমোহনের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নে তার ছাপ বোঝা যায়নি।
আরও পড়ুন- শেষবার বাসভবনের পৌঁছল প্রণব-দেহ, মাথা নুইয়ে প্রণাম মোদীর
বাংলার কংগ্রেস রাজনীতিতেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রভাব ছিল দীর্ঘ৷ দিল্লিতে থাকলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়েছেন একাধিক বার। নিজস্ব গোষ্ঠীও ছিল তাঁকে ঘিরে। তবে সেই গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল প্রণববাবুর ক্ষমতার কারণে, তাঁর সাংগঠনিক যোগ্যতার জোরে নয়। এছাড়াও তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি কোনও দলকেই অসম্মান করতেন না৷ বিরোধী নেতাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল তাঁর৷