ফাঁসির আগে মৃত্যুভয়ে কাঁপুনি! তবুও ছিল না অনুশোচনা! নিথর নির্ভয়ার ৪ দোষীর

ফাঁসির আগে মৃত্যুভয়ে কাঁপুনি! তবুও ছিল না অনুশোচনা! নিথর নির্ভয়ার ৪ দোষীর

নয়াদিল্লি: ২০ মার্চ, শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটা৷ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় তিহার জেলে শেষ হল এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ ফাঁসির দড়িতে ঝুলল নির্ভয়াকাণ্ডের চার অপরাধী মুকেশ সিং,পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা এবং অক্ষয় কুমার সিং৷ এর আগে তিন তিনবার পিছিয়েছে ফাঁসির দিন। অবশেষে আজ ভোরে পড়ল যবনিকা৷ ফাঁসির আগে কড়া নিরাপত্তাবলয়ে ঘিরে ফেলা হয় তিহার জেল৷ ভিড় ঠেকাতে জেলের চারপাশে মোতায়েন করা হয় প্যারামিলিটারি ফোর্স৷

জেল কর্মীরা জানান, ফাঁসির আগে মৃত্যুভয় চেপে ধরেছিল চার অপরাধীকে৷ সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি বিনয়, মুকেশ, অক্ষয় ও পবন৷ এদিন ভোর সোয়া তিনটের সময় তাদের সেলে ঢোকেন জেল আধিকারিকরা৷ চারটের সময় স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের৷ কিন্তু তারা স্নান করতে চায়নি৷ এর ঠিক পনোরো মিনিট পর অন্তিম পুজোপাঠ সেরে নিতে বলা হয় মুকেশদের৷ পুজোর জন্য একজন পুরোহিতকেও নিয়ে আসা হয়৷ কিন্তু পুজো করতেও রাজি হয়নি ওই চার আসামী।

চা-জলখাবার খেতে বলা হলেও, এক ফোঁটা জল মুখে তোলেনি তারা৷ তবে অক্ষয় বাদে আগের দিন রাতের খাবার তারা ঠিক মতো খেয়েছিল বলেই জেল সূত্রে খবর৷ ভাত, ডাল, রুটি আর সবজি দেওয়া হয়েছিল তাদের৷ বিকেলে মাত্র এক কাপ চা খেয়েছিল অক্ষয়৷ এর পর আর একটা দানাও মুখে তোলেনি সে৷  

এদিন ভোর চারটের মধ্যেই জেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ডিজি সন্দীপ গোয়েল। জেল নম্বর তিনে ততক্ষণে এসে গিয়েছেন পবন জল্লাদ৷ ডেপুটি সুপারের ঘর থেকে নিয়ে আসা হয় ফাঁসির দড়ি৷ তিহারে আসেন পশ্চিম দিল্লির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। চার অপরাধীর কাছে তাদের শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়৷ কেউ তাদের শেষ ইচ্ছার কথা না জানালেও, অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে তাদের মধ্যে দু’জন৷

ভোর সাড়ে চারটের সময় আলাদা আলাদা ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তাদের৷ ততক্ষণে পবন জল্লাদ ও অন্যান্য আধিকারিকরা পৌঁছে যান জেলের কালোকুঠুরিতে। এরপর কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয় চারজনের মুখ। পিছনে বেঁধে দেওয়া হয় তাদের হাত। ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসি দড়িতে টান দেন পবন জল্লাদ৷ ফাঁসির সাক্ষী ছিলেন মাত্র ৫ জন। ফাঁসির ঘরে উপস্থিত ছিলেন কারা সুপারিন্টেন্ডেন্ট, ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট, মেডিকেল অফিসার আরএমও, ম্যাজিস্ট্রেট এবং আর একজন কারাকর্মী৷

ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হল। আধঘণ্টারও বেশি সময় তাদের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। এরপর নামিয়ে আনা হয় ঝুলন্ত দেহ৷ চিকিৎসকরা তাদের দেহ পরীক্ষা করে দেখেন৷ ভোর ৬টায় তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এরপর ভোর সাতটায় দেহগুলি দীনদয়াল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হয়। আটটায় শুরু হয় ময়নাতদন্ত৷ ময়নাতদন্তের পর তাদের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 11 =