নয়াদিল্লি: দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ব্যাপক রদবদল হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়৷ শনিবার দেশের নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির কেন প্রয়োজন ছিল, সে কথাই বললেন তিনি৷
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা সারা বিশ্বকে সেরা বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, উদ্যোক্তা দিয়ে এসেছি৷ কিন্তু একুশ শতকের দ্রুত বদলে যাওয়া দুনিয়ায় ভারতের প্রভাব বিস্তার করতে হলে, আমাদের নিজেদেরকেও দ্রুত বদলে ফেলতে হবে৷ এই চিন্তাভাবনার সঙ্গেই দেশে নতুন আবিষ্কারের জন্য, গবেষণার জন্য, উন্নয়নের জন্য, নয়া উদ্যোগের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ইকো সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে৷ শিক্ষার গুণমানের উপর অধিক জোড় দেওয়া হচ্ছে৷ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করা তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য৷
আরও পড়ুন- পরপর ৩ বার দুর্ঘটনা, বিশালাকার ক্রেন ভেঙে ১১ শ্রমিকের মৃত্যু
প্রধানমনন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন আগেই দেশে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ নয়া শিক্ষানীতি একুশ শতকের যুবক-যুবতীদের চিন্তা ভাবনা, তাঁদের প্রয়োজনীয়তা, তাঁদের আশা-আকাঙ্কা পূরণ করতেই তৈরি করা হয়েছে৷ পাঁচ বছর ধরে এই বিষয়ে সারা দেশে ব্যাপক চর্চা- বিতর্ক, প্রতিটি স্তরে আলোচনার পর নয়া শিক্ষানীতি প্রবর্তন করা হয়েছে৷ সঠিক অর্থে সম্পূর্ণ দেশকে, দেশের স্বপ্নকে ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্খাকে পূরণ করতেই এই শিক্ষানীতি আনা হয়েছে৷ প্রতিটি রাজ্যের শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়েছে৷ এটি শুধু একটি পলিসি ডকুমেন্ট নয়৷ ১৩০ কোটির বেশি ভারতীয়র আকাঙ্খার প্রতিচ্ছবি৷
আরও পড়ুন- টাকা নয়ছয়, পুলিশকে হুমকি! গ্রেফতার হয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ‘হিন্দু’ নেতার
এখনও অনেক বাচ্চাই মনে করে, তাদের এমন একটি বিষয়ের উপর বিচার করা হচ্ছে, যার উপর কোনও দিনই তার আগ্রহ ছিল না৷ বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের চাপে জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া বিষয় পড়তে হচ্ছে৷ এই মনোভাবের জন্যই আমাদের দেশের একটি বড় অংশ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও, তাদের শিক্ষা তাঁদের চলার পথে কাজে আসেনি৷ ডিগ্রি থাকলে, খামতি অনুভব করেছে৷ তাঁর ভিতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়নি৷ কিন্তু নয়া শিক্ষানীতির মাধ্যমে এই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করে হয়েছে৷ নমো বলেন, একুশ শতক শিক্ষার যুগ৷ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনকেই গতি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি৷ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ফলপ্রসু করাই এই শিক্ষানীতির লক্ষ্য৷ যুব সমাজের কাছে তাঁর আবেদন, গভীর পড়াশোনা, প্রশ্নের উদ্রেক আর উত্তর অনুসন্ধান কোনও দিনও বন্ধ করবে না৷ শিক্ষার অন্তর্দর্শনই এই শিক্ষানীতির মূল আকর্ষণ৷
আরও পড়ুন- লিপুলেখে সেনা বাড়াচ্ছে লাল ফৌজ, নয়া ইঙ্গিত চিনের
এবার থেকে কোনও একটা বিষয় দিয়ে কাউকে বিচার করা হবে না৷ এখন আর বিজ্ঞান-কলা বা বাণিজ্যের আলাদা ভাগ থাকবে না৷ কেউ চাইলে অঙ্ক আর সঙ্গীত একসঙ্গে শিখতে পারবে৷ কিংবা রসায়নবিদ্যার সঙ্গে ফ্যাশন টেকনোলজি পড়তে পারবে। ছাত্রছাত্রীরা কি নিয়ে পড়তে চায়, সেই দিকেই জোড় দেওয়া হয়েছে৷ এই শিক্ষানীতি অনেক বেশি নমনীয়তা৷ উচ্চশিক্ষাতে মাল্টিপল এন্ট্রি-এগজিটের সুবিধা রাখা হয়েছে৷ অর্থাৎ পড়াশোনার মাঝে কোনও পড়ুয়া কোনও কারণে মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার পরে চাইলে আবার সেখান থেকে শুরু করতে পারবেন। অ্যাকাডেমিক ক্রেডিটের সুবিধা পাবেন ছাত্ররা৷ নমো বলেন, এই ধরনের শিক্ষানীতির দীর্ঘ দিন ধরেই প্রয়োজন ছিল৷
আরও পড়ুন- ভূমি পুজোর আগে অযোধ্যায় পৌঁছল বাংলার পবিত্র মাটি ও জল
তাঁর কথায়, এই শিক্ষানীতি চাকরি প্রার্থী তৈরি করবে না বরং চাকরিদাতা তৈরি করবে৷ প্রতিটি স্তরে সংস্কার সাধন হবে৷ এই নীতি আত্মনির্ভর মানুষ গড়ে তুলবে৷ এছাড়াও নয়া শিক্ষানীতিতে ভারতের আঞ্চলিক ভাষার অগ্রগতি ঘটবে, বিকাশ ঘটবে৷ যা ভারতের একতাকে বাড়াবে৷ ভারতের সমৃদ্ধ ভাষার সঙ্গে বিশ্বের পরিচয় হবে৷ বুনিয়াদি স্তরে মাতৃ ভাষাতে পড়াশোনার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা৷ মাতৃভাষার উপরেও জোড় দেওয়া হয়েছে৷