দেরাদুন: প্রকৃতিও যে নিজের উপর ঘটে যাওয়া অনাচারের প্রতিশোধ নিতে পারে, মানবসভ্যতাকে তা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রবিবার উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের ঘটনা। পরিবেশবিদ এবং ভূ-বিশেষজ্ঞদের মতে ধুলিগঙ্গা এবং হৃষিকেশে দুটি নতুন বাঁধ নির্মাণের জন্য লাগাতার বিস্ফোরণ এবং সুড়ঙ্গ খননের কারণেই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকা। পাশাপাশি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে গলেছে একাধিক হিমবাহের বরফ।
হিমালয় গবেষণায় ইসরোর বিশেষ একটি শাখা জানিয়েছে, গত ২০ বছরে ব্যাপকভাবে গলেছে হিমবাহের বরফ। দীর্ঘ ২০০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলা প্রায় ৬৫০ হিমবাহের উপর চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৭৫-২০০০ সালের তুলনায় ২০২০-২০১৯ -এর সময়কালে হিমবাহের গলন হয়েছে দ্বিগুন। হিমবাহের গলনের বিষয়ে পরিবেশবিদরা সরকারকে বারবার সতর্ক করলেও সেই সতর্কতাকে পাত্তা না দিয়েই গড়ে উঠেছে একাধিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চওড়া করা হয়েছে সড়ক, ভার বাড়ানো হয়েছে পার্বত্য এলাকায়, যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকার বাস্তুতন্ত্র।
পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, উচ্চ উত্তরাখণ্ডে গঙ্গা সহ বিভিন্ন নদীতে মোট ১৬ টি বাঁধ ইতিমধ্যে রয়েছে। এছাড়া ১৩ টি বাঁধ নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে এবং আরো ৫৪ টি বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের রাজ্য সরকার। আর এসবের নির্মাণের জেরে সীমাহীন খননকার্য চালানো হয় পার্বত্য এলাকায়, যার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে প্রকৃতির উপর, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালে ওই রাজ্যেই এমনই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩০০০ এর বেশি মানুষ, তাছাড়া আজও নিখোঁজ রয়েছেন ১০০০ মানুষ। কিন্তু সেই ঘটনাও মানুষ ক প্রশাসনকে শিক্ষা দিতে পারেনি হয়তো।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পর সরকার ও প্রশাসন করা পদক্ষেপ না নিলে আরো বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে উত্তরাখণ্ড সহ একাধিক হিম-রাজ্য। পাশাপাশি ভূবিদরা জানিয়েছেন, হিমালয়ের ধ্বংসলীলা বন্ধ না হলে কেদারনাথ এবং চামলি থেকেও বড় কিছু বিপর্যয় অপেক্ষা করছে হয়তো। এই প্রসঙ্গে তাদের পরামর্শ: প্রকৃতি ও পাহাড়ের রক্ষা।