গৃহবন্দি দেশ, তবুও বাড়ছে নারী নির্যাতন, চিন্তিত জাতীয় মহিলা কমিশন

গৃহবন্দি দেশ, তবুও বাড়ছে নারী নির্যাতন, চিন্তিত জাতীয় মহিলা কমিশন

কলকাতা:  করোনা ভাইরাসের প্রভাবকেও হার মানাল নারী নির্যাতন নামক সামাজিক ব্যাধী। সেই দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এও যেন একধরণের ভাইরাস যা যুগ যুগ ধরে সমাজে মহামারীর আকারেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই তৃতীয় বিশ্বের যুগেও তার প্রতিষেধক অমিল। করোনা আবহে এমনই তথ্য দিচ্ছে জাতীয় মহিলা কমিশন। গত ২৩ শেষ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় মহিলা কমিশনে শুধুমাত্র ইমেল মারফত ৫৮টি পারিবারিক হিংসার অভিযোগ জমা পড়েছে।

অর্থাৎ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেহারে বেড়ে চলেছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারী নির্যাতনের ঘটনাও।   গত ২৪ মার্চ মধ্য রাত থেকে দেশ জুড়ে ২১ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এইমুহুর্তে দেশের ১৩০ কোটি মানুষ নিজের বাড়িতেই কার্যত বন্দীদশায়। লকডাউনের বিধিমেনে এই পরিস্থিতিতে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেননা।  সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে এই ঘরবন্দী দশায় মহিলাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের পরিমাণ ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়েছে।

এপর্যন্ত জাতীয় মহিলা কমিশনে যতগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে তার বেশিরভাগই উত্তর ভারত, বিশেষ করে পঞ্জাব থেকে। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা পিটিআই-কে জানিয়েছেন ‘‘অভিযোগের সংখ্যাটা বেড়েছে। বাড়িতে বসে হতাশায় ভুগছেন পুরুষরা। তাই মহিলাদের উপর যাবতীয় হতাশা উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। পঞ্জাবে সব থেকে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেখান থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে।’’

যদিও রাজ্য অনুসারে এযর নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ নলকডাউনের জেরে বাড়ি থেকে বাইরে বেরতে পারছেন না কেউই। অগত্যা বাড়িতে আটক থেকেই সহ্য করতে হচ্ছে নির্যাতন। তানাহলে সরাসরি বা ডাকযোগে লিখিত আরও অভিযোগ জমা পড়ত দাবি করেছেন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ইমেল মারফতই ৫৮টা অভিযোগ পেয়েছি আমরা। অনেকে ডাকযোগে অভিযোগ জানান। সেগুলি হাতে পেলে সংখ্যাটা আরও বাড়ত।’’ যাঁরা ইমেল করতে জানেন না, তাঁরা স্থানীয় পুলিশ অথবা রাজ্য মহিলা কমিশনে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন বলে জানিয়েছেন রেখা শর্মা। তিনি আরও বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে আমাদের কাছে অভিযোগ পৌঁছবে না ভাবছেন অনেকে। তাঁদের জন্য বলছি, স্থানীয় পুলিশ এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।’’

ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কবিতা কৃষ্ণণ। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই একটা কথা বলেছেন, লকডাউন ঘোষণা হবে জানলে সময় থাকতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন তাঁরা। লকডাউনের জেরে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। যেভাবেই হোক নির্যাতিতাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’’

জাতীয় মহিলা কমিশনে মেয়ের হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন এক ব্যক্তি। পিটিআইয়ের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে ওই ব্যক্তি জানান, রাজস্থানের সীকরে-তে বিয়ে হয়েছে তাঁর মেয়ের। জামাই পেশায় শিক্ষক। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে স্ত্রীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছেন তিনি। এমনকি তাঁর মেয়েকে খেতে পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।

মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ ‘সহেলি’। এই সংস্থার সদস্য বাণী সুব্রহ্মণ্যমের মতে, ‘‘ঘরবন্দি অবস্থায় অনেকেই মাথা ঠিক রাখতে পারেন না। তার মধ্যে হিংসাত্মক আচরণ পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে।’’ সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর রঞ্জনা কুমারীর মতে, ‘‘মহিলাদের জন্য সময়টা খুব একটা ভাল নয়।’’

জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে মোট ২৯১টি পারিবারিক হিংসার অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে ২৩ মার্চের পর থেকে সব অভিযোগই এসেছে ইমেইল মারফত। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে ৩০২টি অভিযোগ জমা পড়েছিল তাদের কাছে। জানুয়ারি মাসে জমা পড়েছিল ২৭০টি অভিযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *