কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছিল পারমাণবিক অস্ত্র? পরমাণু বোমার জনকের মন্তব্যে মিলেছে ইঙ্গিত

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছিল পারমাণবিক অস্ত্র? পরমাণু বোমার জনকের মন্তব্যে মিলেছে ইঙ্গিত

কলকাতা: হিন্দু মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ৷ ১৮ দিন ধরা চলা এই যুদ্ধের ভয়াবহতার যে বর্ণনা বেদব্যাসের কলমে ফুটে উঠেছে, তা আধুনিক যুদ্ধকেও হার মানায়। অগণিত মৃত্যু, বিপুল সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি৷ তবে শুধু এটুকুই নয়৷ যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পাঠকের নজর কাড়ে,  সেটি হল এই যুদ্ধে ব্যবহৃত ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র। বেদব্যাসের মহাভারতে বিচিত্র সব অস্ত্রের বর্ণনা থেকে অনেকেরই অনুমান, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র অথবা তার সমতুল্য কিছু আয়ুধ ব্যবহৃত হয়েছিল।

আরও পড়ুন- ইউক্রেনের গোটা এক শহর ধ্বংসস্তুপ, টেনে বের করা হচ্ছে লাশ

এদিকে, রাজস্থানের জোধপুরের কাছে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা তেজস্ক্রীয় বিকিরণের সন্ধান পান৷ এই অঞ্চলটি এক সময় হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড ড্যাভেনপোর্ট এই অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর সময় এমন কিছু প্রমাণ হাতে পান, যা থেকে মনে করা হয় এই অঞ্চলে সুদূর অতীতে কোনও ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটেছিল। অনুমান, এই বিস্ফোরণ ছিল ড্যাভেনপোর্ট পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপন্ন৷ এই বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা মিলেছে তাঁর বই ‘অ্যাটমিক ডেস্ট্রাকশন ইন ২০০০ বিসি’ (১৯৭৯)-তে৷ 

১২ বছর ধরে প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র অধ্যয়নের পরেই মহেঞ্জোদারো অঞ্চলে অনুসন্ধান চালান ড্যাভেনপোর্ট৷ তাঁর মতে, মহেঞ্জোদারো নগরীর ধ্বংসের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল পারমাণবিক বিপর্যয়৷ কিন্তু এত বছর আগে কে বা কারা এই ধরনের শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল? ড্যাভেনপোর্টের দাবি, এই অস্ত্র ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে ‘মহাভারত’-এও৷ 

মহেঞ্জোদারোয় গলে যাওয়া ইট এবং সবুজ রঙের স্ফটিকায়িত এক বস্তু থেকেই ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ড্যাভেনপোর্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকার পারমাণবিক গবেষণা-প্রকল্প ম্যানহাটন প্রজেক্ট নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন পণ্ডিতরা৷ যা রীতিমতো কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। এই প্রকল্পের অন্যতম রূপকার রবার্ট ওপেনহেইমার (পরমাণু বোমার অন্যতম জনক হিসেবে স্বীকৃত) নাকি ১৯৩৩ সাল থেকে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা চালিয়ে গিয়েছিলেন৷ লক্ষ্য ছিল ‘ভাগবদ্গীতা’ সংস্কৃতে পাঠ করা।

‘শ্রীমদ্ভভাগবদ্গীতা’-র একাদশ অধ্যায়ের দ্বাদশ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন- ‘দিবি সূর্যসহস্রায় ভবেদ যুগপদুত্থিতা।/যদি ভাঃ সদ্রশী সা স্যাৎভাস্বতস্য মহাত্মনঃ।।’ যার অর্থ— ‘আকাশে সহস্র সূর্যের সমান বিকিরণ দেখা গেলে তাকে মহাশক্তিমানের প্রকাশ হিসেবে ধরতে হবে’। শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে অর্জুন তাঁকে প্রশ্ন করেন— ‘কে আপনি?’ উত্তরে কৃষ্ণ বলেন, তিনিই মৃত্যু, জগৎসমূহের সংহারকর্তা। এই শ্লোক বিশ্লেষণ করেই পরবর্তী কালে পণ্ডিতরা প্রশ্ন তোলেন, ‘সহস্র সূর্যের সমান বিকিরণ’ বলতে কি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের কথাই বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ? সুপ্রাচীন মহাভারতের যুগে কী ভাবে তা কল্পনা করা হয়েছিল? মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই সিন্ধু সভ্যতার যুগে ঘটেনি। কিন্তু সেই যুগের প্রযুক্তিগত জ্ঞান যে কুরুবংশের আমলেও বয়ে আসেনি, সেটা কি কেউ বলতে পারে? 

‘মহাভারত’-এ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে এমন কিছু অস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, যা আধুনিক সমরাস্ত্রের সমতুল্য। ক্রিস্টোফার সি ডয়েল-বর্ণিত ‘বিমান পর্ব’-তেও মহাভারতে এই অস্ত্রের ভাণ্ডারের উল্লেখ করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল ব্রহ্মাস্ত্র৷ ‘মহাভারত’ ছাড়াও বেশ কিছু পুরাণে ব্রহ্মাস্ত্রের বর্ণনা মিলেছে৷ চাইলেই এই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করা যেত না৷ সব অস্ত্র ফুরিয়ে যাওয়ার পরেই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করা হত। ব্রহ্মাস্ত্র পূর্বনির্দিষ্ট লক্ষ্য আঘাত হানলে, অনিবার্য ভাবে তা ধ্বংস হয়ে যেত। এই অস্ত্রকেই পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷

এর পর বলতে হয় ব্রহ্মশিরাস্ত্রের কথা৷ এই অস্ত্র ব্রহ্মাস্ত্রের চেয়ে চার গুণ বেশি শক্তিশালী৷  বলা হয় সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার চতুর্মুখের শক্তি থেকে এই অস্ত্রের উদ্ভব৷ এর ধ্বংসলীলাও ছিল মারাত্মক। লক্ষ্যবস্তুর উপরে উল্কাবৃষ্টি ঘটাত ব্রহ্মশিরাস্ত্র।

নারায়ণী অস্ত্র- স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এই অস্ত্র দান করেছিলেন৷ এর ধ্বংস-ক্ষমতা আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সমতুল্য৷ মহাভারতে উল্লেখিত আরও একটি অস্ক্র হল ভার্গবাস্ত্র৷ এই অস্ত্রের শক্তি ব্রহ্মশিরাস্ত্রের মতোই। পুরাণ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট লক্ষে আঘাত হানার পর সেই অঞ্চল ভস্মে পরিণত হত।

মহাভারতে উল্লেখিত আরও একটি অস্ত্র হল পাশুপতাস্ত্র৷ এই অস্ত্র প্রদান করেছিলেন ভগবান শিব৷ তিনি এই অস্ত্র অর্জুনকে দান করেছিলেন। ‘মহাভারত’-এ বলা হয়েছে, এটি ব্রহ্মাস্ত্র, নারায়ণাস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র (অগ্নি কর্তৃক প্রদত্ত অস্ত্র) বা বরুণাস্ত্র (জলদেবতা বরুণ কর্তৃক প্রদত্ত অস্ত্র)-এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।