কলকাতা: ভারতের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে বহু রাজরাজার কাহিনিতে৷ তাঁদের রাজকীয় জীবনশৈলী, আজও আমাদের অবাক করে৷ তাঁদের সম্ভারে থাকা সম্পদের কথা জানলে চমকে উঠতে হয়৷ ময়ূর সিংহাসন হোক বা কোহিনুর হিরে— ভারতীয় ইতিহাসের পাতা উল্টালে এমন বহুমূল্য জিনিসের খোঁজ সহজেই মিলবে। রাজরাজাদের রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে উঁকি দিয়ে এমন কিছু অদ্ভুত জিনিসের সন্ধানও মেলে, যা প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গী৷ সেই সাধারণ জিনিসগুলিকেও এমন প্রাচুর্যের মোড়কে মুড়ে রেখেছিলেন রাজারা, যা শুনলে অবাক হতে হয় বৈকি৷
আরও পড়ুন- ছিল না পুঁথিগত শিক্ষা, পেরোননি স্কুলের গণ্ডি! দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর বানিয়েছিলেন ‘ভারতের এডিসন’
১৮ শতকের কথা। বিশ্ব বাজারে তখন রমরমিয়ে ব্যবসা করছে গোলকোন্ডার হিরে৷ সেই সময় হায়দরাবাদের মসনদে বসে মীর ওসমান আলি খান৷ ইতিহাসবিদরা বলছেন, তিনিই ১৮ শতকের সর্বশেষ ধনী সম্রাট৷ ওসমানের সাম্রাজ্যে ছিল অঢেল হিরে৷ তিনি তার ব্যবহারে কখনও কার্পণ্যও করেননি। জানা যায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাপা রাখার জন্য তিনি এক চমৎকার পেপারওয়েট ব্যবহার করতেন। যা ছিল হিরের তৈরি। ১৮৫ ক্যারাট হিরে দিয়ে ওই পেপারওয়েটটি তৈরি করেছিলেন ওসমান৷
সাল ১৬১২৷ সেই সময় মহীশূর সাম্রাজ্যের বিশাল প্রতিপত্তি। সিংহাসনে তিরুমালারাজের আধিপত্য৷ সম্রাট তাঁর রানিদের এককথায় গয়নায় মুড়ে রেখেছিলেন। সাম্রাজ্য জুড়ে তখন রাজরানীজের ‘গয়নার বাক্স’ নিয়েই চর্চা। কিন্তু ওয়াদিয়াররা মহীশূর সাম্রাজ্য দখল করার সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি টাকা মূল্যের গয়নাগুলিও দখল করে নেয়৷
রানি আলামেলাম্মা গয়না খোয়ানোর দুঃখ সহ্য করতে না পেরে কাবেরী নদীর জলে ঝাঁপ দেন। কিন্তু নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়ার আগে ওয়াদিয়ারদের অভিশাপ দিয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘তালাকাড়ুর সমস্ত উর্বর জমির মৃত্যু হোক, মালাঙ্গিতে ঘূর্ণিঝড় হোক আর ওয়াদিয়ার বংশের রাজারা যেন কোনও দিন তাঁদের সন্তানদের মুখ দেখতে না পান।’’ এই অভিশাপের হাত থেকে বাঁচাতে নাকি ওয়াদিয়াররা রানি আলামেলাম্মার একটি বিশাল মূর্তি নির্মাণ করেন। কিন্তু শাপমুক্ত হননি তাঁরা। বর্তমানে ওয়াদিয়ার রাজপরিবারকে রক্ষা করছেন যদুবীর কৃষ্ণদত্ত ছমরাজ ওয়াদিয়ার। তিনি নিঃসন্তান ওয়াদিয়ার বংশের সম্রাট শ্রীকান্তদত্ত নরসিংহরাজ ওয়াদিয়ারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
জয়পুরের তৎকালীন সম্রাট মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিং আবার তাঁর বিচিত্র শখের জন্য বিখ্যাত৷ ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ নামও উঠেছিল তাঁর। তিনি একবার ইংল্যান্ড ভ্রমণে যাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা, সেখানে গঙ্গাজল নিয়ে যাবেন৷ গঙ্গাজল ধারণ করার জন্য বিশালাকার পাত্র তৈরির নির্দেশ দেন সম্রাট। ইতিহাসবিদদের দাবি, দু’টি বিশালাকার রুপোর পাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিং। ১৪ হাজার রৌপ্যমুদ্রা গলিয়ে নির্মিত হয়েছিল ওই দুই পাত্র৷
১৯১১ সালে জুনাগড়ের সিংহাসনে ছিল সম্রাট তৃতীয় মহম্মদ মহবত খানের রাজত্ব। সম্রাটের একটিই মাত্র শখ, তা হল কুকুর পোষা। তাঁর রাজপ্রাসাদে ছিল ৮০০টি কুকুর৷ প্রতিটি কুকুরের জন্য ছিল আলাদা আলাদা ঘর৷ সেই ঘরে ছিল টেলিফোন৷ প্রত্যেকের পরিচর্যার জন্য ছিল আলাদা কর্মচারী। পোষ্যেরা অসুস্থ হলে ব্রিটেনের চিকিৎসকদের দিয়ে পোষ্যদের চিকিৎসা করাতেন তিনি।
সম্রাট তৃতীয় মহম্মদ মহবত খান সেই সময় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে তাঁর প্রিয় পোষ্য রোশানারার বিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের দিনে যার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা৷ ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল লর্ড আরউইনকেও৷ কিন্তু তিনি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি৷
সাল ১৯০০৷ পটিয়ালার সিংহাসনে তখন রাজ করছেন মহারাজ ভূপিন্দর সিং। তাঁর মহিলা সঙ্গীদের সংখ্যা ছিল অগুনতি। তাঁদের সঙ্গে ছিল ৮৮ জন সন্তান-সন্ততি৷ মূল্যবান ধনরত্নের প্রতিও আগ্রহ ছিল তাঁর। হিরে-পান্নার গয়নায় সাদতেন তিনি৷ এমনতি হিরে দিয়ে অন্তর্বাসরূপী গয়নাও বানিয়েছিলেন মহারাজা ভূপিন্দর। হিরের গয়না ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয়।
ডমিনিক ল্যাপিয়ের এবং ল্যারি কলিন্সের লেখা ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইয়ে মহারাজ ভূপিন্দর সিংয়ের অজানা কথা বর্ণিত হয়েছে৷ সেখান থেকেই জানা যায়, সম্রাট নাকি বছরে এক বার তাঁর সঙ্গীদের সামনে নগ্ন অবস্থায় হাজির হতেন। সম্রাটের পরনে থাকত শুধুমাত্র হিরের অন্তর্বাস। ওই বই থেকে আরও জানা যায়, সম্রাট ভূপিন্দর সিংহের যৌনাঙ্গ নিয়ে নানা রকম ধ্যানধারণা ছিল তাঁর সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, মহারাজের যৌনাঙ্গে কোনও অলৌকিক শক্তি রয়েছে, সেই কারণেই তাঁদের সাম্রাজ্যে কোনও অশুভ শক্তির ছায়া পড়ে না।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>