নয়াদিল্লি: ফের দেশের শীর্ষ আদালতে বড়সড় ধাক্কা খেলেন রাজীব কুমার৷ সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হল না রাজীব আর্জি৷ রক্ষাকবচ মেয়াদ বৃদ্ধির আর্জি জানিয়ে জামিনের আবাদন শুনল না সুপ্রিম কোর্ট৷ আজ আদালতের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনবে না৷ তাঁকে ফের নিম্ন আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ গত সাত দিনে কেন তিনি নিম্ন আদালতে মামলা করলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে দেশের শীর্ষ আদালত৷
আজ মামলার শুরুতেই আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আপনি তো, পুলিশ কমিশনার ছিলেন৷ তরুণ আইনজীবীদের থেকে ভালোই আইন বেঝেন৷ তাহলে, কেন নিম্ন আদালতে যাচ্ছে না৷’’ এদিন রাজীবের তরফেও বাংলার আদলতে অচলাবস্থার কথা তুলে হয়৷ কিন্তু, সেই যুক্তিও কাজে আসেনি৷ খারিজ হয়ে যায় আবেদনের শুনানি৷ আজই শেষ হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সাতদিনের রক্ষাকবচের সময়সীমা৷
এদিন সুপ্রিম কোর্ট রাজীবের আগাম জামিনের আবেদন শুনতে অস্বীকার করে তাঁকে কলকাতা হাইকোর্ট বা নিম্ন আদেলতে আবেদন করতে বলে৷ এমনকী আদালতে কর্মবিরতির তত্ত্ব উড়িয়ে দেন বিচারপতিরা৷ সেক্ষেত্রে রাজীবকে নিজের হয়ে সওয়াল করতে পরামর্শ দেন তাঁরা৷
Saradha chit fund scam: Supreme Court refuses to entertain the plea of former Kolkata Police Commissioner Rajeev Kumar, seeking protection from arrest by CBI till concerned jurisdictional court in West Bengal decides his anticipatory bail plea. pic.twitter.com/dLsQSZHZLV
— ANI (@ANI) May 24, 2019
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চেও প্রেপ্তারির রক্ষাকবচের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করেন রাজীব কুমার৷ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজীব কুমারকে এই বিষয়ে তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠনের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের মহাসচিবের কাছে আবেদন করতে নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু, আদালতের তরফে সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়৷ বহাল রাখা হয় আগের নির্দেশ৷
অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে সোমবার দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন রাজীব কুমার৷ রাজীবের যুক্তি, এই সময় রাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে৷ ফলে তাঁকে আরও সময় দেওয়া হোক৷ এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে গেপ্তারির রক্ষাকবচের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করেন রাজীব কুমার৷ কিন্তু, সেখানেও বড়সড় ধাক্কা খান কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার৷ শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, রাজীবকে নিম্ন আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করতেই হবে। তা না হলে আদালতের রায় অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে সিবিআই।
কিন্তু রাজ্যের সব আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায় রাজীবের পক্ষে আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করা সম্ভব হয়নি৷ তাই ফের সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আগাম জামিনের আবেদন করার সময়সীমা আরও সাতদিন বাড়ানোর অনুরোধ করেন রাজীব কুমারের আইনজীবীরা৷ সেই আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ এর অর্থ, যদি রাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতি না ওঠে ও শুক্রবারের মধ্যে রাজীব কুমার আগাম জামিনের আবেদন না করতে পারেন, তাহলে বড়সড় বিপাকে পড়তে পারেন রাজীব৷ কারণ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সাতদিনের সময়সীমা শুক্রবারই শেষ হচ্ছে৷ তার পরে রাজীবকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আর কোনও বাধা থাকবে না সিবিআইয়ের৷
সোমবার গ্রেপ্তারির ওপর স্থগিতাদেশের চাওয়া রাজীব কুমারের আবেদন শোনার আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি যেন তাঁর আবেদন সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে জমা দেন৷ ফলে আগামী ২৩ মে’র মধ্যে আদালতে থেকে স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম রাজীব কুমারের৷ এর জেরেই বাড়ল রাজীবের গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা, মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
গত শুক্রবার রাজীব কাণ্ডের শুনানিতে সেদিন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজিবের ওপর থেকে রক্ষাকবচ সরিয়ে নিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট৷ এবার সিবিআই চাইলে রাজীবকে জেরা করতে পারবে৷ কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীবকে মাত্র ৭ দিনের জামিনের আবেদনের সুযোগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷
বিসিআই সূত্রে খবর, সারদা মামলায় রাজীব কুমারকে প্রথম সমন পাঠানো হয় ২০১৭-র ১৬ অগস্ট৷ রাজীব সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ছট ও দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না। পুজোর পরে ২৩ নভেম্বর রাজীব কুমারকে ফের তলব করা হয়। কিন্তু সে বারও তিনি আসেননি। তখনই কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের লাউডন স্ট্রিটের বাড়িতে সিবিআই যায়। রাজীব কুমারের সিবিআই জেরা ঠেকাতে আসরে নামেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে৷ দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে শিলংয়ে পাঁচ দিনের টানা জেরার মুখোমুখি হতে হয় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার৷ শেষে সর্বোচ্চ আদালত রাজীবের উপর গ্রেপ্তারিতে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়৷ গত সপ্তাহে সেই রক্ষাকবচের সময়সীমা বেধে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত৷