নয়াদিল্লি: ‘ছাপ্পান্ন ইঞ্চি’ ছাতির প্রধানমন্ত্রীকে ছাপ্পান্নটি প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলেন মহিলা সমাজকর্মীরা। রাজধানী শহর দিল্লি এবং দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে আসা দেড়শোরও বেশি মহিলা সমাজকর্মী সাংবাদিক বৈঠক করেন। মোদি রাজত্বে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনা, সংবিধানের অধিকারের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা, নোটবন্দির প্রভাব, বেকারত্ব, দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি, সর্বোপরি দেশজুড়ে বাড়তে থাকা ঘৃণা-প্রতিটি ক্ষেত্র তুলে ধরে প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা।
সবমিলিয়ে ৫৬টি প্রশ্ন করেন। প্রতিটি প্রশ্নের মধ্য দিয়েই তাঁরা স্পষ্ট করে দেন, দেশ চালাতে মোদী সরকার ঠিক কতটা ব্যর্থ। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করে এই সমাজকর্মীরা বলেন, ‘‘সংবিধানের উপর কীভাবে আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরেই আমরা তার সাক্ষী। বিশেষত মত প্রকাশের অধিকার, কী পরব, কী খাব, কী বলব, কী লিখব, কী পছন্দ করব- সবকিছুই আক্রান্ত এবং সামঞ্জস্যহীনভাবে মহিলাদের উপরও তার প্রভাব পড়ছে। অথচ বিরোধিতার কণ্ঠও পরিকল্পিতভাবে রোধ করে দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। এই সময়কালেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তৈরি হয়েছে এক অসহিষ্ণুতার পরিবেশ।’’
অঞ্জলি ভরদ্বাজ, শবনম হাসমি, পূর্ণিমা গুপ্তা, দীপ্তা ভোগ, অমৃতা জোহরি সহ একাধিক সমাজকর্মী উপস্থিত ছিলেন এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে। ‘‘আমাদের ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনাহার, দারিদ্র, বেকারত্ব, নোটবন্দি, কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন করছি। দেশের বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই সহ প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আঘাত নামিয়ে আনা নিয়েও প্রশ্ন করছি’’, বলেন শবনম হাসমি। দেশের মানুষকে যে জ্বলন্ত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করে জীবন নির্বাহ করতে হচ্ছে, তার থেকে চোখ ঘোরাতেই অভিনেতা অক্ষয় কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বসেন মোদী, কটাক্ষ করেছেন এই সমাজকর্মীরা। ‘‘গত পাঁচ বছরে ক’জন চাকরি পেয়েছেন? কেন সরকার বেকারত্ব নিয়ে তথ্য ধামাচাপা দিচ্ছেন?’’
বেকারত্ব নিয়ে এভাবেই সরাসরি প্রশ্ন করেন তাঁরা। আবার নোটবন্দির পর কালো টাকা দেশে ফিরল কি না, কিংবা আরও যে বিষয়গুলি সামনে এনে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সরকার সেগুলি যে সব কার্যকর হয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? ২০১৫ সাল থেকে কেন মোদী সরকার কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা বন্ধ করে দিল? দেশের কৃষি সঙ্কট নিয়ে লক্ষ লক্ষ কৃষক আন্দোলনে নামলেও কেন সরকার তাঁদের পাশে থাকল না? বিজেপি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কী হলো? একেবারে নির্দিষ্ট করেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন এই সমাজকর্মীরা। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুতে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুরকে বিজেপি কেন প্রার্থী করল? এদিন এমন কঠোর প্রশ্নও করেছেন মহিলা সমাজকর্মীরা। পাশাপাশি তাঁদের প্রশ্ন, সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমদের উপর যে হিংসার ঘটনা বাড়ছে, সেক্ষেত্রে মোদী সরকার কেন নীরব? একইসঙ্গে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসিদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কেরালার সবরিমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশ সুরক্ষিত করে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলেও কেন তা মানল না বিজেপি? মহিলাদের এমন ঝাঁঝালো প্রশ্নে বিদ্ধ করেছেন তাঁরা মোদীকে। মহিলাদের উপর বাড়তে থাকা অত্যাচারের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন এদিন এই সমাজকর্মীরা। মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশে সরকার ঠিক কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাও জানতে চেয়েছেন তাঁরা। লাগাতার নিকাশি কর্মীদের মৃত্যু হলেও তাঁদের সুরক্ষায় মোদী সরকারের ভূমিকা কী? মোদী নিজের প্রচারে কত খরচ করেছেন, তাও স্পষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে বলেছেন সমাজকর্মীরা। এরকমই একাধিক প্রশ্নে জর্জরিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদী বাহিনী। কিন্তু আদৌ এই প্রশ্নগুলোর কোনও সঠিক জবাব তাঁরা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।