নিজস্ব প্রতিনিধি: যেরকম প্রত্যাশা ছিল ঠিক সেটাই ঘটল। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার কার্যত নির্বাচনী বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যে এমনটা হবে সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। একদিকে নিজের সরকারের হাজারো গুণকীর্তন, অন্যদিকে অতীতের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আক্রমণ। তাই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “২০১৪ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে দশ নম্বর স্থানে ছিল। এখধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত পঞ্চম স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগোচ্ছে ভারত। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারত অর্থনীতিতে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে থাকবে”। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,” এতদিন দুর্নীতির রাক্ষস দেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল। আমরা সেই ছিদ্র বন্ধ করেছি।”
তবে প্রধানমন্ত্রী এমন দাবি করলেও সদ্য যে সিএজি রিপোর্ট সামনে এসেছে তাতে বিজেপি সরকারের আমলে অন্তত আটটি ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যথারীতি সেই প্রসঙ্গ মোদীর বক্তব্যে শোনা যায়নি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এদিন দাবি করেছেন সামনের বছরেও লালকেল্লা থেকে তিনি পতাকা তুলবেন। অর্থাৎ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, এমনটাই বলতে চেয়েছেন তিনি। সেই সূত্রে তাঁকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, যে সমস্ত প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন তিনি, সেগুলির উদ্বোধন তাঁর ভাগ্যে লেখা রয়েছে। এছাড়া এদিন ফের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিরোধীদের নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সমস্ত দাবি করলেও তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার সময় যেভাবে প্রতি বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি কেন্দ্র। বেকার সমস্যা দেশ জুড়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি হচ্ছে না। যে উন্নয়নের দাবি তিনি করছেন, জিডিপি’র অঙ্ক কিন্তু সেই কথা বলছে না। এছাড়া পরিবারবাদ ইস্যুতে যেভাবে বিরোধীদের নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বাবা প্রেমকুমার ধুমাল একটা সময়ে হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ছেলে পঙ্কজ সিং উত্তরপ্রদেশ থেকে পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে নয়ডা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিচিত নাম না হলেও তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারি হয়েছেন। এমন উদাহরণ খুঁজলে আরও পাওয়া যাবে। তাই স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সমস্ত কথা বলেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা প্রত্যাশিতভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন। যদিও চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে যেভাবে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে মোদীকে, তা নতুন করে উজ্জীবিত করল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। সব মিলিয়ে লালকেল্লার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে।