নয়াদিল্লি: একই রেল৷ পরিস্থিতিও এক৷ কিন্তু, বাংলাকে বঞ্চিত রেখে মুম্বইয়ে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ বাংলায় পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও করোনা আবহে মুম্বইয়ে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ছুটছে লোকাল৷ মুম্বইয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও বাংলায় এখনও লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে নিরুত্তর রাজ্য সরকার৷ বাংলায় নতুন করে রেল পরিষেবা চালু করার ইচ্ছে প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় দফায় রাজ্যকে চিঠি পাঠাল রেল৷ কিন্তু, তাতেও মেলেনি সমাধান৷ লোকাল চালানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে বাম-কংগ্রেস৷ সরব হয়েছে বিজেপির দুই সাংসদ৷ লোকাল ট্রেনের চাকা না গড়ানোয় জেলায় জেলায় ছড়িয়েছে পড়েছে বিক্ষোভ৷ এবার সেই বিক্ষোভের আবহে আনলক ৫ পর্বের মেয়াদ আরও বাড়াল কেন্দ্র৷ ফলে, আগামী মাসেও লোকাল ট্রেন চলাচল নিয়েও থেকে গেল ধোঁয়াশা৷
আজ আনলক ৫ পর্বে দ্বিতীয় দফায় গাইডলাইন প্রকাশ করল কেন্দ্র৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফ থেকে জানান হয়েছে, আনলক ৫ পর্বে নতুন করে কোনও শিথিলতা দেওয়া হচ্ছে না৷ এখনও পর্যন্ত যা নিয়ম আছে, তা বলবৎ থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত৷ ফলে, আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চালু বিষয়ে এখনও কোনও সবুজ সঙ্গ মেলেনি৷ তবে, রাজ্য অনুরোধ করলে ট্রেন চালানোর ছাড়পত্র মিলতে পারে৷
বর্ধিত আনলক ৫ পর্বে কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা৷ সিনেমা হলে ৫০% আসনে দর্শক প্রবেশ করতে পারবে৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের ওপর ছেড়ে রেখেছে কেন্দ্র৷ বদ্ধ স্থানে ২০০ লোকের ওপর জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সবাইকে করোনা বিধি মেনে চলতে হবে৷ কনটেনমেন্ট জোনে বজায় থাকবে লকডাউন৷
করোনা আবহে সেই মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ করোনা-কালে ধাপে ধাপে সবকিছু চালু হয়ে গেলেও লোকাল ট্রেনে এখনও রয়েছে লকডাউনের গেরো৷ একদিকে করোনা আহবে প্রভাবিত জীবন, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত জীবিকা৷ তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে জীবিকা বাঁচানোর লড়াই৷ করোনাকালে আগ্নিমূল্য বাজার, তার উপর দ্বিগুন বাস ভাড়া৷ আগে গন্তব্যে পৌঁছতে যত টাকা খরচ করতে হত সাধারণ যাত্রীদের, আজ সেই পথ যেতে লেগে খবর পড়েছে দ্বিগুন৷ সব মিলিয়ে নেজেহাল আম জনতা৷ সাধারণ জনতা সমস্যায় পড়লেও এখনও নিরুত্তর প্রশাসন৷ আর তাতেই বাড়ছে জনতার ক্ষোভ৷ কেননা, বহু মানুষের অন্নসংস্থানের প্রধান মাধ্যম লোকাল ট্রেন৷ সেটাই যদি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে সাধারণের জীবন? সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে৷ কিন্তু, তাতে কি? লোকাল ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’য় আর বাঁধা হয়ে উঠছে না রাজ্য ও রেলের সমন্বয়ের কারণে৷
করোনা মহামারী আবহে রেল কর্মী ও জরুরি কাজে যুক্তদের জন্য ইতিমধ্যেই স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু সেই স্পেশাল ট্রেনে ওঠার দাবি জানিয়ে চুঁচুড়া স্টেশনে এবার বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় যাত্রীরা৷ রেল লাইনে লোহার রড, গাছের ডাল ফেলে রেল অবরোধ করলেন ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ৷ হুগলীর পান্ডুয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে হয়েছে বিক্ষোভ৷ চুঁচুড়ায় রেল অপরাধের ঘটনায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে রেলপুলিশ৷ অন্যদিকে একই দাবি জানিয়ে সোনারপুরে সাধারণ যাত্রীদের একাংশ ইতিমধ্যেই লোকাল ট্রেন ভাঙচুরের চালিয়েছেন৷ সোনারপুর লোকাল ভাঙচুরের পর থেকেই রাজ্যের প্রতিটি লোকাল ট্রেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ অবাঞ্চিত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তবে, সাধারণ যাত্রীরা কবে থেকে পরিষেবা পাবেন, তা নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ৷ এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজ্য সরকার৷