চেন্নাই: লকডাউন জারি হওয়া থেকে ১০০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি বহু পরিযায়ী শ্রমিক৷ সময়ের কাটা ঘুরছে শুধু অপেক্ষায়৷ আশায় বুক বেধে দিন কাটছে আশ্রয় শিবিরে৷
দিন দুই আগেও দেখা গিয়েছে উত্তর চেন্নাইয়ের ব্রডওয়েতে চেন্নাই কর্পোরেশন মিডিল স্কুলের মাঠে মাস্ক আর ধুতি পড়ে কাগজের প্লেট হাতে রাতের খাবারের অপেক্ষায় পড়েছে লম্বা লাইন৷ নীল পোশাকে মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের এক আধিকারিক এসে সকলের প্লেটে ভেজিটেবল পোলাও দিয়ে দিলেন৷ কাজ শেষ হতেই রওনা দিলেন বাইকে চেপে৷
খাওয়া শেষে কেউ কেউ আড্ডা জমালেন, কেউ আবার মাঠের পাশে স্লিপের উপর কিংবা সিড়ির উপর বসে শুরু করলেন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি৷ কেউ বোতলে জল ভরলেন, কেউ বা রাগ উপড়ে দিলেন সন্তানের উপর৷ তামিলনাড়ুর এই স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শেল্টার৷ এখানে কেউ কেউ পরিবার নিয়েই থাকছেন, কেউ বা একা৷ পেশায় কেউ গাড়ির চালক, কেউ বা রাজমিস্ত্রী, রঙ মিস্ত্রি, কেউ আবার আসবাব তৈরি করেন৷ অনকেই এখানে এক মাস কাটিয়ে ফেলেছেন৷ কেউ আবার এক সপ্তাহ৷ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং ওডিশা থেকে একসময় কাজের খোঁজে এই দক্ষিণী রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা৷ দীর্ঘ লকডাউনে এখন তাঁদের সকলেই কর্মহীন৷ কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাঁরা৷
গত ২৫ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে আজও চেন্নাইয়ের এই ৯০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছেন৷ এখনও পর্যন্ত চেন্নাই থেকে ১০০ টি ট্রেন ছেড়েছে৷ প্রায় ১.৩৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চেন্নাই কর্পোরেশনের এক প্রবীণ আধিকারিক৷ কিন্তু এই শেল্টারে থাকা পরিযায়ীদের ‘নম্বর’ এখনও আসেনি৷ প্রতিদিন সন্ধ্যে হলেই অস্থির হয়ে পড়েন তাঁরা৷ রাম, গুরুদেব, পাপ্পুর মতো পরিযায়ীদের মুখে উঠে আসে একটাই প্রশ্ন, আজ রাতে কি ট্রেন আছে? নিজেরাই বলে ওঠেন, কালও তো একটা ট্রেন ছিল শুনেছিলাম৷ কিন্তু তাঁদের যে বাইরে বেরতে মানা৷ বলা হয়েছে, বাইরে বেরলেই অপেক্ষা করছে করোনার বিপদ৷
পরিযায়ী শ্রমিক গৌরব বলেন, ‘‘আজও হয়তো ট্রেন আছে৷ কিন্তু আমরা তা জানি না৷ আমরা প্রথমে সেন্ট্রাল স্টেশনে গিয়েছিলাম৷ সেখান থেকে আমাদের এই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে৷ ২ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে৷ এখানেই আটকে আছি৷ ওরা বলছে বাস এসে নাকি আমাদের নিয়ে যাবে৷ সত্যিই কি তাই?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বাড়ি বিহারে৷ কিন্তু ঝাড়খণ্ডে পৌঁছতে পারলেও হবে৷ আমি বাড়ির পথ খুঁজে নেব৷ ট্রেনে একটু বসার জায়গা পেলেই চলবে৷ শুধু বাড়ি ফিরতে চাই৷’’ এখন শুধু তাঁদের পালা আসার অপেক্ষা৷