চণ্ডীগড়: জীবনে চলার পথ কোনও দিনই মসৃণ ছিল না৷ প্রতিমুহূর্তে আষ্টেপিষ্টে ধরেছে প্রতিবন্ধকতা৷ প্রতিকূল স্রোতে গা ভাসিয়েই আজকে সে বিজয়িনী৷ অসম্ভবকে সম্ভব করেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরিযায়ী শ্রমিক-কন্যার প্রাপ্ত নম্বর ৮০.৪ শতাংশ৷
এই বছর হরিয়ানা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল পূজা রানি৷ রোহতাক কলোনির ১০ বাই ১০ ফুটের টিনের ছোট্ট চালা ঘরে বাবা-মা আর তিন বোনের সঙ্গে কষ্টের সংসার তার৷ এরই মধ্যে একাগ্রতার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে৷ পূজা বলে, ‘‘পাঁচ বছর আগে ‘গান্ধী স্কুলে’ পড়াশোনা শুরু করি আমি৷ স্ট্রিটলাইটের আলোয় নীচে এখানেই পড়াশোনা করত অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলেমেয়েরা৷’’
পূজার বাবা কৈলাশ কুমার পেশায় সামান্য দিনমজুর৷ অন্যদিকে স্থানীয় কিছু বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান তার মা৷ পূজা বলে, ‘‘আজ খুব আনন্দের সঙ্গেই বলছি, আমি পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছি৷ আমার এই সাফল্যে আমার বাবা-মায়ের আনন্দের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই৷ বিশেষ করে আমার মা৷ আমাদের চার বোনকে পড়াশোনা শেখানোর জন্য সারাদিন বাড়ি বাড়ি কাজ করে সে৷ সমস্ত কষ্ট সহ্য করে আমাদের পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়ে চলেছে মা৷’’
পূজার বাবা কৈলাশ বলেন, ‘‘আমার মেয়েরা পড়াশোনার মধ্যেই তাদের জীবন খুঁজে পায়৷ ওরা সব সময় পড়াশোনার মধ্যেই ডুবে থাকে৷ পূজা বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায়৷ যাতে সে তার মতো গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখাতে পারে৷ অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে পারে৷’’
পূজার কথায়, ‘‘আমি যখন পেরেছি, তখন আমার মতো বাকিরাও পারবে৷ শুধু তাদের একটু সাহায্য প্রয়োজন৷ যেটা আমি গান্ধী স্কুল থেকে পেয়েছি৷’’ পূজার এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ড. রমেশ পোখারিয়াল নিশাঙ্ক৷ টুইট করে তিনি বলেন, ‘‘এক পরিযায়ী শ্রমিকের কন্যা পূজা রানি এইচবিএসই দশম শ্রণির পরীক্ষায় ৮০.৪% নম্বর পেয়েছে৷ পরিবারের সঙ্গে ফুটপাতের উপর ১০x১০ টিনের চালা ঘরে থেকেও সে প্রমাণ করে দিয়েছে কোনও কিছুই অসম্ভ নয়৷ পূজা তুমি আমাদের সকলের কাছে প্রেরণা৷’’