বাতি জ্বালাও সফল করতে বন্ধ স্কুল-কলেজে নির্দেশিকা মানব মন্ত্রকের!

স্কুল-কলেজগুলিকে পাঠানো কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশিকায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক সহ পরিবারের সদস্যদের একে অপরকে প্রদীপ জ্বালাতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সদ্য চালু হওয়া সরকারি অ্যাপ 'আরোগ্য সেতু' ও আয়ুষ মন্ত্রকের  প্রোটোকলগুলি ডাউনলোড করার অনুরোধ করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেশবাসীর সম্মিলিত লড়াইয়ের শক্তি ও সাহস সঞ্চয়ের লক্ষ্যে আজ রাত ন-টায় ন-মিনিটের জন্য দেশবাসীকে বৈদ্যুতিক আলো বন্ধ রেখে মোমবাতি,প্রদীপ, বা টর্চলাইট জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের মানুষ। তবে একাংশের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। তাঁদের মতে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যখন মানুষের প্রাণে বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জের মুখে, সেখানে এই ধরণের ভাবাবেগ তৈরী করার প্রচেষ্টা নিরর্থক। 

এরমধ্যেই এমন এক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে যা এই বিরোধিতাকে আরও বড়সড় সমালোচনার মুখে ফেলে দেবে বলাই বাহুল্য। একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রধান মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে । 

নোভেল করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদন স্বেচ্ছায় একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য। যেখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশিকায়  বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ অনুসরণ এবং এতে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করছে। 

গত ৩রা এপ্রিল স্কুল ও কলেজ গুলিকে এমএইচআরডি সচিব অমিত খারের পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয় যে  “আলোর শক্তি উপলব্ধি করতে এবং যে উদ্দেশ্যটির জন্য আমরা সবাই মিলে লড়াই করছি তা তুলে ধরতে” শিক্ষার্থীদের এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে বলা উচিত।

তাছাড়াও স্কুলগুলিকে পাঠানো ওই নির্দেশিকায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক সহ পরিবারের সদস্যদের, সদ্য চালু হওয়া সরকারি অ্যাপ 'আরোগ্য সেতু' ও আয়ুষ মন্ত্রকের  প্রোটোকলগুলি ডাউনলোড করার অনুরোধ করা হয়েছে। যেখানে “বাচ্চাদের নিজেদের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়” জানা যাবে। 

এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি), অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই), ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টেকনিকাল এডুকেশন (এনসিটিই), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং () এনআইওএস), জাতীয় পরীক্ষা সংস্থা (এনটিএ), কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংস্থা, এবং নভোদয় বিদ্যালয় সমিতির প্রধানদের উদ্দেশ্যে ।

এই সূত্র ধরেই বোর্ডের অধীনস্থ সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে চিঠি পাঠায় সিবিএসই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর-পশ্চিম দিল্লির একটি নামী স্কুলের প্রিন্সিপাল সংবাদমাধ্যম 'দ্য ওয়্যারকে' জানিয়েছেন,” আমরা আমাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ৬ এপ্রিলের মধ্যে মধ্যে 'আরোগ্য সেতু' অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে বলেছি, ৫ এপ্রিল আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের একটি করে প্রদীপ জ্বালাতে উৎসাহিত করার জন্য ইমেলও করেছি। যদিও ৪ এপ্রিল সকালে আমরা বিজ্ঞপ্তিটি পেয়েছি তাই এক-দু'দিনের মধ্যেই সমস্ত নির্দেশাবলী কার্যকর করা আমাদের পক্ষে বেশ কঠিন ছিল, কোনপ্রকারে আমরা এই কাজ করতে পেরেছি। 

এদিকে দ্য কুইন্ট- এ প্রকাশিত খবর অনুসারে, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশিকা পাশাপাশি একইসঙ্গে শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্কুলগুলির  জন্য একটি বিশেষ ধরণের ফর্মও পাঠানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে। যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে সেই স্কুলগুলি থেকে কতজন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালাতে অংশগ্রহণ করব? কতজন শিক্ষক ও অভিভাবক আয়ুষ মন্ত্রকের আরোগ্য সেতু অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন এবং এই সংক্রান্ত আরও কিছু প্রশ্ন। এই নির্দেশিকাযর প্রেক্ষিতে উত্তর দিল্লির একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “এটি কেবল মোমবাতি জ্বালানো নয়, এই বিজ্ঞপ্তিটি এসেছে যে কতজন লোক আয়ুর্বেদ অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন যা করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় উপকারী বলে মনে করা হয়। তবে মন্ত্রকের একটি পৃথক ফর্ম মোট মোমবাতি জ্বালানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আরোগ্য অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডকারী পিতা-মাতার এবং শিক্ষকদের মোট সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে … আমি মনে করি না এটা করা ঠিক হয়নি … যখন সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে, তখন আপনি একে বাধ্যতামূলক বলে মনে করছেন।”

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্যে এইচআরডি মন্ত্রকের মে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে সেখানে তিনটি পয়েন্টে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- ১. আরোগ্য সেতু অ্যাপ্লিকেশন৷ ২.দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানোর সাধারণ উপায়। ৩.২০২০ সালের ৫ এপ্রিল রাত ৯ টায় ৯ মিনিটের জন্য মোমবাতি জ্বালানো। অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড লিঙ্কগুলি ছাড়াও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রোটোকলও(সাধারণ ব্যবস্থা) ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছিল যা অনলাইনেও উপলব্ধ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব অমিত খেরের স্বাক্ষর ছিল। এমনকি বিজ্ঞপ্তি সঙ্গে যুক্ত প্রটোকল গুলির কোনটা বাধ্যতামূলক তাও উল্লেখ করা ছিল না।

মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে আলাদা একটি কাগজে আয়ুর্বেদিক সাধারণ কিছু পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যা কমানো সম্ভব।  সুতরাং, করোনা মোকাবিলায় সংহতির প্রতীক হিসেবে দেশবাসীর সম্মিলিতভাবে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালানোর উদ্যোগ স্বেচ্ছায় পালনের আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সফল করতে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মে ভূমিকা নিয়েছে তাতে যথেষ্টই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও। তার ওপর এই উদ্যোগের সঙ্গে আয়ুষের প্রোটোকল এবং অ্যাপ ডাউনলোডের বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে। কৌতূহল তৈরী হয়েছে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *