মথুরা: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর৷ হাজার হাজার উন্মত্ত করসেবকরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ৷ মসজিদ ধ্বংসের চক্রান্তকারী বা প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসেবে নাম জড়িয়েছিল বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, গোবিন্দাচার্য, উমা ভারতী, অশোক সিঙ্ঘল, কল্যাণ সিংহ, সাধ্বী ঋতম্ভরা, বিনয় কাটিয়ার মতো প্রথম সারির নেতার৷ কী ভাবে লাখ লাখ করসেবকদের অযোধ্যায় ডাকা হয়েছিল৷ কী ভাবে সমাবেশে দাঁড়িয়ে তাঁদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করা হয়েছিল তা সকলের সামনেই পরিষ্কার ছিল৷ তবুও আদালতের সামনে সিবিআই-এর কোনও অভিযোগ ধোপে টিকল না৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারল না সিবিআই৷ স্বভাবিক ভাবেই বাবরি রাম গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে৷ রাম মন্দির, বাবরি রায়ের পর এবার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংক্রান্ত মামালর দিকে তাকিয়ে গেরুয়া শিবির৷
পরপর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মামলা জেতার পর গেরুয়া শিবিরের পাথির চোখ শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি৷ ‘অযোধ্যা তো স্রেফ ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী আভি বাকি হ্যায়!’ এই স্লোগানে চলছে প্রচার৷ অযোধ্যা ও বাবরি বিবাদ মেটার পর ‘মথুরা বিবাদ’ নিয়ে আদালতে দিকে তাকিয়ে গেরুয়া শিবির৷ মথুরার জেলা দেওয়ানি আদালতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি জমি বিতর্ক মামলার শুনানি নিয়ে শুরু হয়েছে কৌতুহল৷
শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমির ১৩.৩৭ একর জমির মালিকানা চেয়ে ইতিমধ্যেই আদালতে গিয়েছে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান৷ ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে পার্সি ভাষায় দেওয়া ঔরঙ্গজেবের একটি নির্দেশ অনুবাদ করেছিলেন প্রয়াত প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার৷ শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমির অধিকার চেয়ে মামলায় ওই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়৷ আবেদনে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তি চিরকালই দেবোত্তর থাকে৷ আক্রমণকারীদের হাত থেকে ওই সম্পত্তি উদ্ধারের দাবিও জানানো হয়েছে৷ চলছে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংক্রান্ত মামলা৷
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে মথুরার কাটরা কেশবদেব মন্দির চত্বরের ১৩.৩৭ একর জমি৷ মামলাকারীদের দাবি, শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির ওই মন্দির চত্বরেই রয়েছে৷ ১৬৬৯ থেকে ১৬৭০ সালে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে ওখানে মসজিদ তৈরি হয়৷ মন্দির চত্বরের জমি থেকে সেই মসজিদ সরানোর দাবিও জানানো হয়৷ ১৯৬৮ সালের একটি রায় বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে নয়া আবেদনে৷ ১৯৬৮ সালে আদালতের রায়ের পর শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সংস্থান ও শাহি ঈদগা ম্যানেজমেন্ট কমিটির মধ্যে জমি সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছিল৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী ওই জমিতেই মন্দির ও মসজিদের সহাবস্থান স্থায়ী রূপ পেয়েছিল৷ এখন সেটিকে পুরোপুরি শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি বলে দাবি পেশ করা হয়েছে আদালতে৷
অন্যদিকে পুরোহিত সংগঠনের জাতীয় সভাপতি তথা কংগ্রেস নেতা মহেশ পাঠক দাবি করেছেন, মন্দির-মসজিদ বিতর্ক উস্কে দিয়ে মথুরার অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে বহিরাগতরা৷ মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান নিয়ে আগেই ঐকমত্য হয়েছে৷ এখন কেন সেখানে মন্দির-মসজিদ নিয়ে বিতর্কই?