নয়াদিল্লি: দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে নতুন করে ভাববে দেশ৷ লালকেল্লা থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন,‘‘মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ালে তাদের মধ্যে অপুষ্টি রোখা যাবে কি না, তা পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। এই কমিটি রিপোর্ট জমা দিলে তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’’ সূত্রের খবর, এবার থেকে ১৮ নয়, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স হবে ২১৷
আরও পড়ুন- নগ্ন হয়ে লছমনঝুলা ব্রিজে ভিডিও, চাপে পড়ে ক্ষমা চাউলেন ফরাসি মহিলা
আমাদের দেশে নাবালিকা বিবাহ কতটা প্রচলিত?
তথ্য বলছে আমাদের দেশে অধিকংশ মেয়েই ২১ বছর পার করে গাঁটছড়া বাঁধে৷ দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২২.১ বছর (১ নম্বর চার্ট অনুযায়ী)৷ প্রতিটি রাজ্যেই মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২১-এর বেশি৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে বাল্য বিবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ সর্বশেষ ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএফএইচএস-৪) অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৪ বছরের (চার্ট-২) ২৬.৮ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়৷
বিয়ের সঙ্গে মেয়েদের স্বাস্থ্য কতখানি জড়িত?
বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মেয়েদের স্বাস্থ্যও৷ আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা দীপা সিনহার মতে, বাল্য বিবাহ রোধ করা গেলে ‘মেটারনাল মর্টালিটি রেট’ বা প্রসূতি মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে৷ বর্তমানে প্রতি ১ লক্ষ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় ১৪৫ জন মায়ের৷
অন্যদিকে, ভারতের ইনফ্যান্ট মর্টালিটি বা শিশু মৃত্যু হারও অনেকটাই বেশি৷ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই হাজার জনের মধ্যে মৃত্যু হয় ৩০টি শিশুর৷ BRICS অর্থনীতি অনুযায়ী ভারতে এই দু’টি সূচকই সর্বোচ্চ৷ নিউট্রিশন রিসার্চের প্রধান এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার সহকারী অধ্যাপিকা সোয়েতা খাণ্ডেলওয়াল বলেন, অল্প বয়সী মায়েদের রক্তাল্পতা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়৷ ভারতে প্রজনন বয়সের (১৫ থেকে ৪৯) অধিকাংশ মহিলাই রক্তাল্পতার শিকার৷ মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার প্রকোপ গত ২০ বছরে ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷
আরও পড়ুন- ফের ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা চিনের, রুখে দিল ভারতীয় সেনা
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন ললিতা কুমারমঙ্গলমের কথায়, ‘‘এখন বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮। তা সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এলাকায়, এমনকি কিছু শহরেও, ঋতুমতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অর্থাৎ ১২-১৩-১৪ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে স্কুলে যেতে পারে, সবার আগে তা নিশ্চিত করা দরকার।’’ ২০২০-২১ সালের বাজেট ভাষণে ‘মেটারনাল মর্টালিটি রেট’ বা প্রসূতি মৃত্যুর হার কমানো এবং মহিলাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন৷