হাজার অনুরোধেও মেলেনি শববাহী গাড়ি, মৃত ভাইজিকে কাঁধে চাপিয়েই গ্রামে ফিরলেন কাকা

হাজার অনুরোধেও মেলেনি শববাহী গাড়ি, মৃত ভাইজিকে কাঁধে চাপিয়েই গ্রামে ফিরলেন কাকা

ভোপাল: বছর চারেকের ছোট্ট ভাইঝিটি প্রথম থেকেই কাকার প্রাণাধিক প্রিয় ছিল। সন্তানসহ স্নেহেই তাকে আঁকড়ে ধরে একটু একটু করে বড় করছিলেন কাকা। কিন্তু হঠাৎই ঘটে গেল অঘটন। দিঙ্ক্যেক আগে হঠাৎই ওই ছোট্ট মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড় এবং রীতিমতো তার জীবন সংশয় দেখা দিলে একপ্রকার জোর করেই তার কাকা শহরে গিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাণাধিক প্রিয় ভাইঝিকে। কিন্তু তারপরেও বিপদ টলানো যায়নি। শহরের উন্নততর চিকিৎসা পেয়েও একটু একটু করে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি। কিন্তু মৃত্যুর পরেও যন্ত্রণার অবসান হয়নি।

জানা যাচ্ছে প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পরে বিজেপির বহু বিধায়কের হাতে পায়ে ধরেও মৃত ওই শিশুটির কাকা ভাইজির শবদেহ বহন করার জন্য একটি গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স পাননি। তার কাতর আবেদনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন সাড়া দেয়নি কেউই। আর তাই শেষে ভাইঝির মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়েই হেঁটে হেঁটে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন তার কাকা। ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ভদ্রলোকের ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে বছর ৪৫-এর এক ব্যক্তি ছোট একটি মেয়েকে কোলে করে হেঁটে চলেছেন একা। প্রথমদিকে বিষয়টি বোঝা না গেলেও পরে জানা গিয়েছে ওই ব্যক্তির কোলে যে বাচ্চা মেয়েটি রয়েছে সে আদৌ জীবিত নয়। ভাইজির মৃতদেহ একপ্রকার বাধ্য হয়েই কাঁধে করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন ওই ব্যক্তি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কার্যত হতবাক নেটপাড়ার লোকজন। ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। এর সঙ্গেই কেন স্থানীয় প্রশাসনের কেউ ওই ব্যক্তির সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।

একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের ছত্তরপুর গ্রামে। চার বছরের ওই শিশুকন্যাটি ওই গ্রামের এই বাসিন্দা। সম্প্রতি সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার কাকা তাকে গ্রাম থেকে অনতিদূরে বক্সার কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ভর্তি করেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু জেলা হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ভাইঝির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে পৌঁছান কাকা এবং বারবার ছোট ওই মেয়েটির দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু তার এই অনুরোধে কর্ণপাত পর্যন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে লোকেরা সাহায্য না করায় ওই ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। অভিযোগ তারাও মৃত ওই শিশুটির কাকাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। শেষে কোনো উপায়ান্তর না দেখে ওই ব্যক্তি তার ভাইঝির মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়ে এই বাড়ির দিকে রওনা দেন। পথ চলতি কিছু মানুষজন মোবাইলে গোটা ঘটনাটি রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। আর তাতেই জনসমক্ষে আসে গোটা বিষয়টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + one =