কাশ্মীর ইস্যুতে ‘নীরবতা’ ভাঙলেন মমতা, কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?

নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলের বিরোধিতায় এবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যুতে মুখ খোলেন মমতা৷ জানিয়ে দেন, এই বিল তৃণমূল সমর্থন করে না৷ কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যা ঘটেছে সব দেখেছি৷ কারও সঙ্গে কথা না

কাশ্মীর ইস্যুতে ‘নীরবতা’ ভাঙলেন মমতা, কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?

নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলের বিরোধিতায় এবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যুতে মুখ খোলেন মমতা৷ জানিয়ে দেন, এই বিল তৃণমূল সমর্থন করে না৷

কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যা ঘটেছে সব দেখেছি৷ কারও সঙ্গে কথা না বলে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ জম্মু ও কাশ্মীর প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই-বোন৷ জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার কেন্দ্রের  পদ্ধতি নিয়ে আমার আপত্তি আছে৷ আমরা এই বিলকে সমর্থন করি না৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানা হয়নি৷ কেন্দ্র সংবিধান লঙ্ঘন করেছে৷ সরকার সিদ্ধান্ত দেশের পক্ষে বিপদজনক৷ ভোটব্যাংক বাঁচাতে রাজনীতি করছে বিজেপি৷ জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে কেন্দ্র৷ এই বিল পেশ করার আগে সর্বদল বৈঠক করে আলোচনা করতে পারত কেন্দ্র৷ কিন্তু, যেভাবে বিলটি পাস করিয়ে নেওয়া হল, তাতে আমাদের আপত্তি আছে৷’’ কেন মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? প্রশ্ন তোলেন মমতা৷ যদিও, কেন্দ্রের আনা জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল নিয়ে সোমবার দিনভর কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি মমতা৷ এবার, মঙ্গলবার চেন্নাই যাওয়ার আগে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলে সোমবারের মমতা তাঁর নীরবতা ভাঙলেন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল৷

জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ায় বিষয়ে রাজ্যসভার এবার লোকসভায় তীব্র প্রতিবাদ জানাল তৃণমূল৷ লোকসভায় কাশ্মীর ইস্যুতে বিতর্কে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ সুদীুপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত দেশের ঐক্যকে নষ্ট করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তৃণমূল৷ একই সঙ্গে কেন মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তৃণমূলের তরফে৷

এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ তাহলে কেন যুদ্ধ জয়ের কথা কেন বলা হচ্ছে? যদি জম্মু-কাশ্মীরের মঙ্গলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে কেন ৬০ হাজারের বেশি সেনা সেখানে মোতায়েন করা হল? কেন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে পৃথক করা হল? কেন জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যদা ছিনিয়ে এনে কেন্দ্র শাসিত রাজ্যের তরমা দেওয়া হল৷ আর সন্ত্রাস মোকাবিলায় যদি এহেন পদক্ষেপ হয়ে থাকে তাহলে কেন মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? আমরা বিবিধের মাঝে মিলন বিশ্বাস করি৷’’ জম্মু কাশ্মীর ৩৭০ ধারা নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণের পর তৃণমূলের তরফে ওয়াকআউট করা হয়৷

জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা তুলে দেওয়ার বিষয়ে লোকসভায় পেশ করা হয় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল৷ বিল পেশ হতেই কাশ্মীর ইস্যুতে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীকে অমিত শাহকে আক্রমণ অধীর চৌধুরীর৷ এদিন অধিবেশন শুরুতেই লোকসভায় কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন অমিত শাহ৷ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে পাল্টা আক্রমণ করেন কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী৷ নিয়ম না মেনেই জম্মু-কাশ্মীর ভাগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন অধীর৷ সিমলা চুক্তি, লাহোর চুক্তি সত্ত্বেও এটা কীভাবে আভ্যন্তরীণ বিষয়? অমিত শারের ব্যাখ্যা চান অধীর৷ পাল্টা জবাব দেন অমিত শাহ৷ কোনও নিয়ম ভাঙা হয়েছে? অধীরের প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ অংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এদিন সংসদে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ জানন, কংগ্রেস আমলেও দু’বার রাষ্ট্রপতির অধিকার প্রয়োগ হয়েছিল কাশ্মীরে৷ ৩৭০(৩) ধারায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রয়েছে ৩৭০ ধারা বাতিল করার৷ জম্মু-কাশ্মীরর সংবিধানে একই কথার উল্লেখ আছে বলেও মন্তব্য অমিত শাহের৷ তাই জম্মু-কাশ্মীরে আইন প্রণয়নে কোনও বাধা নেই৷ জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরও অন্তর্ভূক্ত বলেও দাবি করেন মন্ত্রী৷ অমিত শাহের এই মন্তব্য ঘিরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর বিতর্ক৷  কেন্দ্র শাসিত হলেও দু’ই এলাকাতেই হিল কাউন্সিল কাজ করবে বলেও জানান তিনি৷

রাজ্যের সীমা বিন্যাস করতে হলে বিধানসভায় পাস করাতে হয়৷ সংবিধানের ৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে বলেও অমিত শাহকে আক্রমণ করেন মনীশ তিওয়ারি৷ জন্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সংসদে আলোচনা হয়েছে৷ কিন্তু, সেই রাজ্যের বিধানসভায় এই নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ ৩৭০ ধারার জন্য জন্মু-কাশ্মীর এতদিন বঞ্চিত থেকেছে বলেও দাবি করেন বিজেপি সাংসদ যুগল কিশোর শর্মা৷

৩৭০ ধারা খর্ব করার প্রস্তাব পেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের৷ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জেরে জম্মু ও কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে৷ একই সঙ্গে লাদাখ হবে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল৷ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে এবার টুইট করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু৷ খোলাখুলি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান তেলুগু দেশম পার্টির সুপ্রমো৷ চন্দ্রবাবু লেখেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে তেলুগু দেশম পার্টি৷ আমি জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তির জন্য প্রার্থনা করি৷’’

কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে চূড়ান্ত বিরোধীতা করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল সহ বামফ্রন্ট৷ আজ, সোমবার জম্মু ও কাশ্মীকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে দিনভর সংসদে গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থানে বসেছে কংগ্রেস-তৃণমূল-বামফ্রন্ট সহ একাধিক বিরোধী দল৷ এদিন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েনের পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসে নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত দেশের মাথা জম্মু ও কাশ্মীরকে কেটে খুন করল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ এর দায় কেন্দ্রকে নিতে হবে৷ এভাবে কোনও পূর্ণ রাজ্যকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে পারে না কেন্দ্র৷ আজ জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 13 =