মুম্বই: গ্রামের বুক চিড়ে চলে গিয়েছে অসংখ্য পথ৷ সেই পথের ধারেই খোলা আকাশের নীচে চলছে ক্লাস৷ ব্ল্যাক বোর্ডের বদলে বাড়ির দেওয়ালই এখন ভরসা৷ সেখানেই ছবি এঁকে ছাত্রছাত্রীদের পড়া বুঝিয়ে চলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ তাঁদের ঘিরে রয়েছে খুদে পড়ুয়ার দল৷
করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চ থেকেই বন্ধ রয়েছে স্কুল৷ লেখাপড়া চলছে অনলাইনে৷ কিন্তু অর্থের অভাবে অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু পড়ুয়া৷ তাদের কথা ভেবেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন মহারাষ্ট্রের নিলম নগরের একটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ তাঁরা দেখলেন স্মার্ট ফোন না থাকায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে বেশ কিছু পড়ুয়া৷ এই সমস্যা সমাধানে একটা বুদ্ধি আঁটলেন তাঁরা৷ ভাবলেন, বাচ্চারা এমনিতেই বাড়ির বাইরে খেলতে ভালোবাসে৷ তারা যদি বাইরে খেলতে পারে, তাহলে পড়তে পারবে না কেন?
আরও পড়ুন- ৫ সেপ্টেম্বর কেন পালিত হয় শিক্ষক দিবস? সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ সম্পর্কে কিছু কথা
যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ ক্লাস শুরু হল গ্রামের রাস্তায়৷ ছয় থেকে ষোলো বছরের ১,৭০০ পড়ুয়া ধীরে ধীরে যোগ দিল এই আউটডোর ক্লাসে৷ প্রতিদিন ছোট ছোট গ্রুপে গ্রামের বিভিন্ন গলিতে ছবি আঁকা দেওয়ালের সামনে জড়ো হয় তারা৷ তার পর বাড়ির ধাপিতে বসে, কিংবা রাস্তায় দাঁড়িয়েই নোট নেয় পড়ুয়ারা৷ গ্রামের লোক বসতিও নেহাত কম নয়৷ প্রায় ৩০ হাজার লোক রয়েছে এই গ্রামে৷ তার মাঝেই বহাল তবিয়তে চলছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা৷ আশা মারাঠি বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাম গায়কোয়াড় বলেন, ‘‘বহু পরিবারেরই ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই৷ তাই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আমরা এই পরিকল্পনা করি৷’’
প্রতিদিন সকালে গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে আসেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ পড়া বুঝিয়ে দেন ছাত্রছাত্রীদের৷ বাড়ির দেওয়াগুলিতে ত্রিকোনমিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজি ও মারাঠি ভাষায় লেখা রয়েছে৷ ১৩ বছরের যশবন্ত অঞ্জালঙ্কার বলে, প্রতিদিন মা যখন দোকান থেকে দুধ আনতে পাঠায়, তখন দেওয়ালে লেখাগুলো পড়তে পড়তে যাই৷ বড় হয়ে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে৷ তার কথায়, যাদের কাছে ইন্টারনেট নেই তাদের জন্য এই দেওয়ালই সঠিক বিকল্প৷
আরও পড়়ুন- করোনা আবহে কীভাবে হবে ভার্চুয়াল শিক্ষক দিবস? রইল কিছু টিপস
ইতিমধ্যেই গ্রামের ২০০টি দেওয়াল স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে আঁকানো হয়েছে৷ আগামী দিনে আরও ২৫০টি দেওয়ালে এই ভাবেই পাঠ্য বিষয় তুলে ধরা হবে বলে আশাবাদী স্কুলের প্রধান শিক্ষক তসলিমা পাঠান৷ তিনি জানান, এই কাজের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারাও৷ এখনও পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকা জমা পড়েছে স্কুলের তহবিলে৷