রামায়ণ অনুসারে নবমী তিথির সঙ্গে শ্রী রামচন্দ্রের বিজয় গাঁথা জড়িত। শরৎকালে সারা বাংলা জুড়ে মা দুর্গার যে অকালবোধন অনুষ্ঠিত হয়, তা শ্রী রামচন্দ্র কর্তৃক প্রচলিত। কে ছিলেন রামচন্দ্র? উত্তরে সবাই বলবে, মহর্ষি বাল্মীকি রচিত মহাকাব্য রামায়ণের প্রধান চরিত্র শ্রী রামচন্দ্র।
পদ্যাকারে লিখিত এই মহাকাব্য জুড়ে রয়েছে অযোধ্য নরেশ দশরথ নন্দন রামচন্দ্রের জীবন কাহিনী। মহাকাব্যের কল্পনা আর মানুষের বিশ্বাস সম্মিলিত রূপ নিয়ে সারা ভারত জুড়ে এই দিনটি পালন করা হয় ভগবান বিষ্ণুর রাম অবতারের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে। এই বীরগাঁথায় বলা আছে শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে মা দুর্গার আরাধনা করে প্রবল যুদ্ধের পর রামচন্দ্র লঙ্কার অত্যাচারী রাজা রাবণকে পরাস্ত করেন এবং তাঁর স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করেন। রামায়ণ অনুসারে এটি শরৎকালের শুক্লপক্ষের নবমী তিথির কথা। ঠিক অন্য কাহিনী শোনা যায় চৈত্রমাসে বাসন্তী পুজার নবমী তিথিতে।
এই দিনে সারা দেশ জুড়ে শ্রী রামচন্দ্রের ভক্তগণ তাঁর জন্মোৎসব পালন করেন। রামায়ণে বর্ণিত আছে তিনি হলেন সারা পৃথিবীর জাত শ্রেষ্ঠ পুরুষ। ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করার পর তাঁর রাণী কৌশল্য, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা ৪ পুত্র লাভ করেন। কৌশল্যার গর্ভে পুত্ররূপে স্থান গ্রহণ করেন স্বয়ং নারায়ণ। তিনি শ্রী রামচন্দ্র। রামজন্ম বৃত্তান্তের সঙ্গে পুরাণে জড়িত আছে এক চিত্তাকর্ষক কাহিনী। দেবর্ষি নারদ এক সুন্দরী রাজকন্যার প্রেমে পড়ে তার স্বয়ম্বর সভা উপস্থিত হতে চান। নিজের রূপ নিয়ে স্বয়ম্বর সভায় যাওয়ার জন্য তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। শুধুমাত্র স্বয়ম্বর সভার জন্য নারায়ণের রূপ তাঁকে প্রদান করার জন্য আর্জি জানান নারদ। নারায়ণ তার মনবাঞ্ছা পুরণের আশ্বাস দেন। সেইমতো নারদ উপস্থিত হয় স্বয়ম্বর সভায়। রাজকুমারী বরমাল্য নিয়ে নারদের কাছে উপস্থিত হতেই হাসতে শুরু করেন।
নারদ বুঝতে পারেন তাঁর প্রভু পরিহাস করে তাঁর মুখের বদলে মর্কটের মুখ বসিয়ে দিয়েছে। রাগে দুঃখে নারদ নারায়ণকে অভিশাপ দিয়ে বলেন, রাম অবতার রূপে তাঁর পৃথিবীতে জন্ম হবে। এই জন্মে তিনিও তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী সীতাকে হারানোর শোক পাবেন। পুরাণ বর্ণিত এই কাহিনীর সঙ্গেই নাকি যোগ রয়েছে রামায়ণের। এই অভিশাপ খন্ডাতেই স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এসেছিলেন শ্রী রাম রূপে। দীর্ঘ পত্নী বিরহের শোক এবং রাবণ বধের পর স্ত্রী সীতাকে পুনঃরুদ্ধার নিয়েই রামায়ণ রচনা করেন বাল্মীকি।