বীরেন ভট্টাচার্য, গাজিপুর: ভারতবর্ষ নদীমাতৃক দেশ বলেই পরিচিত সেই সুপ্রাচীন কাল হতেই। হয়তো ইন্ডিয়া বা ভারত নামকরণ হওয়ার আগে থেকেই। সিন্ধু উপত্যকা হওয়ায় স থেকে হ-এর অপভ্রংশে হিন্দুস্তান হওয়া, কিংবা তারও আগে থেকেই। নদীর গতি ভারতে যেমন বহমান, তেমনই আরেকটি স্রোতও বহমান, তা হল রাজনীতি। ভারতীয় রাজনীতির স্রোত এতটাই সাবলীলভাবে বয়ে যায়, যে, কখন কোন দিকে ঢুকে পড়ে, তা বোঝা মুস্কিল। সে শিক্ষা হোক, নাগরিক দাবির আন্দোলন হোক বা কোনও ন্যায়বিচারের দাবিই হোক। তবে কৃষক বিক্ষোভের জায়গাটি কিন্তু রাজনৈতিক স্রোতের প্রতিকূল , সৌজন্যে বিক্ষোভরত কৃষকরাই।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দিল্লির চারটি সীমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের আনা কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। “সর্বনাশা” এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকরা। তাঁদের সঙ্গে ৬ রাউন্ড আলোচনা করেও জট কাটেনি। দিনের পর দিন আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। বুধবার সরকারের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবেন কৃষক নেতারা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বারবেলাতেও উত্তপ্ত গাজিপুর সীমানা। সরকার তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি বহাল। ইতিমধ্যেই কৃষক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস। দু দফায় সিংঘু সীমানায় গিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। পথে নেমে আন্দোলন এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাহুল গান্ধি সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা। তবে রাজনৈতিক দলগুলির এই প্রয়াসকে মোটেও পাত্তা দিতে চান না বিক্ষোভরত কৃষকরা। তাঁদের সাফ হুঁশিয়ারি “কৃষকদের আন্দোলনে আসতে চাইলে কৃষক হয়ে আসুন।”
ভারতের মতো একটি দেশ যেখানে, সব সমস্যারই সমাধান হয় রাজনৈতিক পথে, সেখানে এই অবস্থান কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই নিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, “প্রচার করা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি প্রচার করছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। এটি ৫০০ শতাংশ মিথ্যা কথা। আমাদের েই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল আমাদের মদত দেয়নি এবং আমরা কারও কাছে যাইনি। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলিনি।এই আন্দোলনের ভাবনাচিন্তা কৃষকদের, তার ভিত্তিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা কৃষকদের, আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা। কোনও বাইরের শক্তিকে এর ১০০ মিটারের মধ্যে আসতে দেওয়া হয়নি।”
তবে বিক্ষোভরত কৃষকদের এই মন্তব্যে ক্ষুণ্ণ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, “ওদের আন্দোলন, ওরা যা মনে করবে, সেটাই হবে। আমরা তো গিয়েছি, আমাদের দলের লোকেরা গিয়েছেন…এই কথাটার কোনও মাানে নেই। আমরা তো রাজনৈতিক দল, আমরা তো কৃষক হয়ে যেতে পারব না। আমরা তো রাজনৈতিক দল হিসেবেই গিয়েছি ওখানে।” বিজেপি একাধিকবার অভিযোগ করেছে, কৃষকদের এই আন্দোলনে বহিরাগত শক্তির হাত রয়েছে। সেই অভিযোগ খণ্ডাতেই কি এই অবস্থান কৃষকদের, তার অবশ্য কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।