তীর্থযাত্রার জের, রাতারাতি আবর্জনার পাহাড় কেদারনাথে

তীর্থযাত্রার জের, রাতারাতি আবর্জনার পাহাড় কেদারনাথে

দেরাদুন: চলতি মাসের শুরুতেই খুলেছে চারধামের দরজা। করোনার দাপটে প্রায় দু’বছর এই চারধাম যাত্রা বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে ফের তীর্থযাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হল কেদার-বদ্রীর দরজা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই  অন্যবারের তুলনায় এইবার বেড়েছে তীর্থযাত্রীদের ভিড়। আর তাতেই সামনে আসছে একের পর এক সমস্যার কথা। সম্প্রতি জানা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে এই চারধাম যাত্রায় আগত তীর্থযাত্রীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই বেশি। চারধামের দরজা খোলার মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই অন্ততপক্ষে ২০ জন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং পরিশ্রমের কারণে হয় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে, নয়তো উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যু হচ্ছে তীর্থযাত্রীদের। ফলে চারধাম যাত্রাতে আসা যাত্রীদের শরীর, স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এমতাবস্থায় সম্প্রতি সামনে এসেছে উত্তরাখণ্ডের চারধাম যাত্রার ক্যাম্পগুলোর আশেপাশের বেশকিছু ছবি, আর তাতেই চক্ষু চড়কগাছ পরিবেশবিদদের। সম্প্রতি যে ছবিগুলি সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কেদার-বদ্রীতে পৌঁছানোর জন্য তার আশেপাশে বিশ্রাম নেওয়ার যে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলি বানানো হয়েছে তার চারপাশ ইতিমধ্যেই আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পের আশেপাশের পাহাড়ের ঢালে প্লাস্টিকসহ প্রায় সব ধরনের বর্জ্য জমে কার্যত পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এই ছবি সামনে আসতেই সরব হয়েছেন পরিবেশবিদরা। কেদার-বদ্রীর মত সুন্দর পাহাড়ি এলাকা যদি এইভাবে নোংরা করা হয় তাতে আদতে পরিবেশের ক্ষতি এমন দাবি তোলা হয়েছে তাঁদের পক্ষ থেকে।

 সর্ব ভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে যে ছবিগুলো সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কেদার-বদ্রী যাওয়ার রাস্তায় তুষারাবৃত পর্বতসহ বিশাল কয়েকটি ভূমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প বানানো হয়েছে। যেখানেই এই ক্যাম্প রয়েছে সেখানেই জায়গাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে বজ্র পদার্থ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। প্লাস্টিক থেকে শুরু করে পরিতক্ত জলের বোতল, ব্যাগ এবং অন্যান্য আরো নানা ধরনের বজ্র পদার্থে গোটা এলাকা রাতারাতি আস্তাকুরের দূষিত এলাকার রূপ নিয়েছে।

 এই বজ্র পদার্থের ছবিগুলি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। পাহাড়ি এলাকার নোংরা করা প্রসঙ্গে গাড়োয়াল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এমএস নেগি বলেছেন, ‘কেদারনাথের মতো সংবেদনশীল জায়গায় যদি এভাবে প্লাস্টিকের বজ্র জমা হতে থাকে তাহলে তা পরিবেশের জন্য খুবই বিপদজনক। পরবর্তীকালে এটা ভূমিধস কিংবা বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের কখনই ২০১৩ সালের দুর্যোগের কথা ভোলা উচিত নয় এবং সে ক্ষেত্রে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।’

 উল্লেখ্য ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির কারণে ব্যাপক বিপর্যয় বন্যা এবং ভূমিধস হয় কেদার-বদ্রীসহ উত্তরাখণ্ডের পাহারিএলাকায়। এই বিপর্যয় ভারতের এখনও পর্যন্ত সবথেকে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে একটি। সেই প্রসঙ্গ তুলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরও বলেছেন, পর্যটকের সংখ্যা যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে। আর তাতেই আশেপাশের পরিবেশে যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনই বাড়ছে প্লাস্টিকের আবর্জনা।

 উল্লেখ্য প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর এই বছরের ৩ মে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে শুরু হয়েছে চারধাম যাত্রা। এই চারধাম যাত্রা চলবে প্রায় চার মাস। আগস্ট মাসের রথ যাত্রার দিন ফের বন্ধ হবে কেদার-বদ্রীর দরজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *