শ্রীনগর: করোনা অতিমারির দাপটে আজ লকডাউন শব্দটির সঙ্গে যেন ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গিয়েছি আমরা৷ কিন্তু কারফিউ, বনধ এই শব্দগুলির সঙ্গে কোনও দিনই অপরিচিত ছিল না ভূ-স্বর্গ৷ বিশ্বের অন্যতম সেনা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কারফিউ, বনধ বা স্কুল বন্ধের বিষয়গুলো যেন বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে সেখানকার পড়ুয়াদের৷
টানা ছ’মাস বন্ধ থাকার পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি যখন স্কুল খুলল, তখন বন্ধু আর শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠেছিল ৯ বছরের ছোট্ট জান্নাত তারিক৷ ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেই সময় থেকেই কড়া লকডাউন জারি করা হয় কাশ্মীর উপত্যকায়৷ বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ৷ চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অবশেষে স্কুলমুখো হয় সেখানকার পড়ুয়ারা৷ স্কুলে ফেরে ছোট্ট জান্নাতও৷ কিন্তু মাস ঘুরতেই ফের শুরু হয় লকডাউন৷ তবে এইবার কারণটা ছিল ভিন্ন৷ আর সেটা হল করোনা প্যান্ডেমিক৷
কয়েক দশকের বিদ্রোহ, বিক্ষোভ এবং সেনা অভিযানে ব্যহত হয়েছে কাশ্মীর উপত্যকার প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থা৷ স্কুল বন্ধ থাকায় বছরের পর বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবীদের হাত ধরে কমিউনিটি স্কুল আর অস্থায়ী ক্লাসরুমে সেই ফাঁক পূরণ করার চেষ্টা চলেছে৷ তবে বিশাল সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং সর্বসাধারণের চলা ফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় পড়ুয়াদের একটা ক্ষুদ্র অংশই যোগ দিতে পেরেছে অস্থায়ী ক্লাসরুমে৷ কাশ্মীর উপত্যকার এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে করোনাভাইরাস৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মন ও তাদের আবেগের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে৷ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই তাদের কাছে৷ বাড়িতে শিক্ষকের স্থান নিয়েছেন বাবা-মায়েরাই৷ বদলে গিয়েছে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি৷ ফলে স্কুলের সেই অভিজ্ঞতা, সেই স্মৃতি রোমন্থন করাটাও কঠিন হয়ে উঠছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর কাছে৷ সারা বিশ্বের পড়ুয়ারা যখন স্কুল ছেড়ে অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, তখন কাশ্মীরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যরাও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাই-স্পিড ইন্টারনেট৷ ভারত বিরোধী বিক্ষোভ রুখতেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু বাড়িতে বন্দি থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে এখানকার পড়ুয়াদের৷ ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত মন্থর৷ কাশ্মীরের পড়ুয়াদের কাছে অনলাইন ক্লাস শুধুই কল্পকাহিনী৷ বরং বাড়ির বাইরে বন্দুকের শব্দটাই তাদের কাছে কঠিন বাস্তব৷
বছর ১১-র মহসিন শাফি বলে, ‘‘আমরা অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারছি না৷ স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগও নেই আমাদের কাছে৷’’ হাইস্পিড ইন্টারনেট না থাকায় শিক্ষকরাও অধিকাংশ সময় ভিডিও আপলোড করতে পারছেন না৷ নিতে পারছেন না অনলাইন ক্লাস৷ তবে সীমিত সুযোগ দিয়েই সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ৷ মাসের পর মাস পড়াশোনা বন্ধ থাকার পর গত জুন মাসে শ্রীনগরে একটি কমিউনিটি স্কুল শুরু করেন ইঞ্জিনিয়র মুন্নের আলম৷ তিনি এখন কমিউনিটি স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক৷ খোলা আকাশের নীচেই চলছে তাঁর ক্লাস৷ নয়া স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ জাগিয়েছে৷ কেউ কেউ চেয়ারে বসে ক্লাস করছে, কেউ আবার মাটিতেই মাদুর বিছিয়ে বসে পড়ছে পড়তে৷ সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রেখেই চলছে তাদের ক্লাস৷
আরও পড়ুন- 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর পথে আরও একধাপ, ১০১টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি মন্ত্রকের
আরও পড়ুন- দেশের ইতিহাসে প্রথম! কৃষিতে ১ লক্ষ কোটির প্যাকেজে চমক মোদীর
আরও পড়ুন- ‘ঘরে ফিরছি’! ফেসবুকে লিখে বিমানে উঠেছিল পরিবার, দুর্ঘটনায় তছনছ গোটা সংসার