নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপুঞ্জের চাকরি ছেড়ে ভারতে ফেরার পর কখনও তিনি নরেন্দ্র মোদীর সারথি হয়েছেন, কখনও আবার ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কখনও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক হয়ে ভোট ময়দানে নেমেছেন৷ ভোটযুদ্ধে তাঁদের বৈতরণীও পাড় করিয়েছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর৷ তবে এবার আর অন্যের জন্য রণকৌশল নয়৷ নিজের রাজনৈতিক দল আনছেন পিকে৷
রাজনীতির অলিন্দে কান পাতলে শোনা যায়, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরাট সাফল্যের নেপথ্য নায়ক ছিলেন এই প্রশান্ত কিশোর। নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, নানা উদ্ভাবনী কৌশলের জেরে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জাতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর রণনীতির জেরেই প্রতিপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগে বিজেপি শিবির প্রচার ময়দানে দশ গোল দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার আগে ২০১২ সালে নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয়বারের জন্য গুজরাতের মসনদে আনার পিছনেও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন পিকে৷ তার পর রাজনীতির রণাঙ্গনে অমেক চোরা স্রোত বয়ে গিয়েছে৷ ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ময়দানে ঝাঁপায় টিম পিকে৷ তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্কে ভর করে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
যদিও একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরেই পিকে জানিয়েছিলেন, তিনি আর ভোট কুশলী হিসাবে কাজ করবেন না৷ শুরু হবে নতুুন সফর৷ সেই মতোই সূরজ যাত্রা নামে বিহার জুড়ে এক প্রচারাভিযান শুরু করেন তিনি৷ প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরজ অভিযান’ই এ বার রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে৷ আগামী ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘জন সুরজ অভিযান’-নতুন পরিচয় পাবে৷ তাঁর দলের নাম হবে ‘জন সুরজ’ দল।
পিকে জানিয়েছিলেন, এই প্রচার অভিযান একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার পর প্রায় এক কোটি মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন৷ রবিবার, পটনায় এক জনসভায় পিকে সাফ জানান, রাজনৈতিক দল গঠনের পর জন সূরজকে জেনারেল, ওবিসি, মুসলিম ইত্যাদি পাঁচ শ্রেণির উপদলে ভাগ করা হবে। প্রতিবার এই পাঁচ শ্রেণি থেকে এক একজনকে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে প্রথমে কে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং কতদিন, সেই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে৷
তবে পাখির চোখ অবশ্যই বিহার বিধানসভা ভোট৷ শুধু রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশই নয়, রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চান ভোট কুশলী। বিহারের ২৪৩টি বিধানসভা আসনেই যে জনসূরজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, সে কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন পিকে। তাঁর কথায়, বিহারের রাজনীতিতে লালু, নীতীশের সঙ্গে আধিপত্য রয়েছে বিজেপি’র। বিহার বিজেপি এবং আরজেডি-র সঙ্গে নীতিশ কুমারের জেডি(ইউ)-র জোট সরকার দেখেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বিকল্প হাতিয়ার জন সূরজ৷ এমনটাই মত প্রশান্তের৷