কলকাতা: সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সত্যতা জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ তুলে ধরলেন বায়ুসেনা প্রধান ভাইস মার্শাল আর জি কাপুর৷ দেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কত জন মারা গিয়েছে, করা মারা গিয়েছে? মমতা ছোঁড়া সেই প্রশ্নের ‘সঠিক’ পরিসংখ্যান তুলে দিতে পারলেন না বায়ুসেনা প্রধান৷
আজ, দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ভাইস মার্শাল আর জি কাপুর ঠিক একই প্রশ্নের মুখোমুখি হন৷ জবাবে বায়ুসেনা প্রধান জানান, এই তথ্য জানানো সম্ভবন নয়৷ কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা জানানো না হলেও বায়ুসেনা তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে সফল হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘বালাকোটে জইশের জঙ্গিঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আগেভাগে বলে দেওয়া ঠিক নয়। তবে আমরা যেটা চেয়েছিলাম, তেমন ফলই পেয়েছি। বায়ুসেনার কাছে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের প্রমাণ রয়েছে৷ তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেবে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা৷’’
Air Vice Marshal RGK Kapoor to question by ANI on bombing on JeM terror camps in Balakot: Premature to say number of casualties on the camp, whatever we intended to destroy we got that result pic.twitter.com/lYzggEwGge
— ANI (@ANI) February 28, 2019
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েকটি পাক বিমান ভারতে ঢোকে। হামলার আশঙ্কায় ভারতীয় বায়ুসেনা তা আটকায়। পাক যুদ্ধবিমান তাড়াতে গিয়ে ভেঙে পড়ে ভারতীয় মিগ। ভারতীয় সেনা ঘাঁটিই ছিল বিমানগুলির টার্গেট। সেই কারণেই সেগুলিকে আটকায় ভারতীয় বায়ুসেনা। পাক যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তাতে ভারতের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আজ যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বায়ুসেনার পক্ষ থেকে এমনটাই জানালেন বায়ুসেনার ভাইস মার্শাল আর জি কাপুর। এছাড়াও তিনি বলেন, আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে, যে এফ ১৬-ই এই মিশনে ব্যবহার হয়েছে। যেটি ভারতের রাজৌরি থেকে উদ্ধার হয়।
বৃহস্পতিবার তিন সেনাবাহিনীর প্রধানের বৈঠকের আগেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ‘সত্যতা’ জানতে চান মমতা! সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কত জনের মৃত্যু হয়েছে তাও জানতে চাইলেন মমতা৷ এদিন নবান্ন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা ভারত সরকারে পাশে আছি৷ কিন্তু, আমরা জানতে চাই, বিমান হামলায় ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আদৌ কোনও হতাহত হয়েছে কি না৷ কারণ, আমি বেদিশে মিডিয়ার বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি৷’’
WB CM: After air strike, PM did not hold any all party meet. We want to know details of the operation. Where the bomb was dropped, how many people died. I was reading foreign media and they said that none died and some media houses said one died. We want to know the details. pic.twitter.com/jRSvcpbCTH
— ANI (@ANI) February 28, 2019
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেক বিদেশি মিডিয়া বলছে, ‘‘এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি৷ বোমটা মিস হয়েছে৷ এবং মানুষ মারা যায়নি৷ কেউ বলছে একজন মারা গিয়েছে৷ তাহবে সত্যিটা কী? এটা তো লোকে জানতেই পারে৷ আমরা ফোর্সের সঙ্গে আছি৷ কিন্তু, ফোর্সের সঙ্গে থাকলেও আমরা চাই ফোর্সকে দিয়ে সত্যি কথা বলানো উচিত৷ দেশেকে সত্য জানানো উচিত৷ রাজনীতির প্রয়োজনে আমরা যুদ্ধ চাই না৷ দেশের প্রয়োজনে যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে আমরা দেশের সঙ্গে আছি৷ কিন্তু, রাজনীতির প্রয়োজনে বা নির্বাচনের জেতার প্রয়োজনে যুদ্ধ হোক আমরা চাই না৷ আমরা শান্তি চাই৷’’
বুধবার রাজধানীতে অবিজেপি-জোটের বৈঠক মঞ্চ থেকে শহিদের নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তোলা হয়৷ শহিদের রক্ত নিয়ে বিজেপিকে রাজনীতি করতে দেব না বলেও জানান মমতা৷ বিরোধীদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই সরকারের পাশে আছি, অথচ প্রধানমন্ত্রী এমনই যে এখনও পর্যন্ত তিনি নিজে একটা সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন না? এরপরেই কলকাতায় দলের কোর কমিটির মিটিংয়ে যে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, সেটি ফের এদিনের বৈঠকে তোলেন। বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাণ হারাচ্ছে আর সেটিকে নিয়ে মোদি, অমিত শাহরা রাজনীতি করছে। এটা মানা যায় না। আর যাই হোক শহিদের রক্ত নিয়ে ওদের রাজনীতি করতে দেব না। ফুঁসে ওঠেন মমতা।
ফলে, সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ইস্যুতে ফের তপ্ত হতে শুরু করেছে জাতীয় রাজনীতি৷