ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার সমাধান কি তাড়াতাড়ি হওয়া সম্ভব?

ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার সমাধান কি তাড়াতাড়ি হওয়া সম্ভব?

977b1bd2ae92882bf61f02f311e6c2fd

তপন মল্লিক চৌধুরী: ভারত-চিন সীমান্তের উত্তেজনা ঠান্ডা করতে আধ ডজনের মতো বৈঠক হয়েছে। দু’দেশের সামরিক সম্পর্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন দু’দেশের সেনা কমান্ডাররা। সামরিক পর্যায়ের বৈঠকের পরে শান্তির জল ছেটানো হয়েছে। কিন্তু তাড়াতাড়ি যে এই ইস্যুতে বরফ গলবে না, সে কথা আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা বলেছিলেন আরও বেশ কিছুদিন চলবে ঠাণ্ডা লড়াই। ওই সব উচ্চ পর্যায়ের বৈঠককে দু’দেশই ইতিবাচক বলেছেন প্রত্যেকবার। কিন্তু ঠাণ্ডা লড়াই যে আরও বেশ কিছু দিন চলবে সে কথা প্রত্যেকবার জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল। 

ইতিমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এই আলোচনাকে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে দু’দেশে বর্তমানে সীমান্তে শান্তি রক্ষার পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরে আরও আলোচনা চাইছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে। একটু মনে করা যেতে পারে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে কি বলা হয়েছিল।

 

আরও পড়ুন- চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, LAC তে ডিসএনগেজমেন্টের স্পষ্ট বার্তা রাজনাথের

ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উভয় পক্ষ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তবর্তী এলাকার অবস্থা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে সম্মত হয়েছে। একইসাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ভারত-চিন সীমান্ত অঞ্চল গুলির শান্তি স্থাপন নিয়ে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে চুক্তি গুলিও বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। 

এরপরে দেখে নেব ভারতের তরফে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। লাদাখ সীমান্তের প্যাংগং লেক বরাবর একাধিক ফিঙ্গারে বারংবার নিজেদের অবস্থান পাল্টে দেখা গেছে লাল-ফৌজকে। আর সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে ভারত। সূত্রের খবর, পুরনো স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বৈঠকের পরেই প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকা থেকে চিনের কাছে দ্রুত স্থল ও বায়ু সেনা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করে ভারত। 

37f6f86569a691f7686a7ce863ffd36f

অন্যদিকে গালওয়ান উপত্যকা, এবং গোগরা উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে সেনা প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব দেওয়া হয় ভারতের তরফে। এদিকে আর জটিল হতে পারে সম্পর্ক, বলে জানান প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। ২০১৮ সালে মোদী-জিনপিং বৈঠকের রেশ ধরেও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির কথা বলতে দেখা যায় বিদেশ মন্ত্রকে। ওই বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে আরও বলা হয়, ভারত ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের এটা ৭০ বছর। আর সেই উপলক্ষে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে উভয় পক্ষই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাইছে। 

আরও পড়ুন- শিক্ষক দিবসে কেঁপে উঠল ভূমি, কম্পের মাত্রা ৪ রিখটার স্কেল

এরপর আমারা দেখলাম লাদাখ সংঘাত নিয়ে মস্কোয় সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক ভারত–চীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে রফাসূত্র অধরা ঠেকে গেল।  সংঘাতের মধ্যেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হল ঠিকই কিন্তু সমাধান অনেক দূরে রয়ে গেল। মস্কোয় ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সেই বৈঠক ঘিরে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। দু’পক্ষই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্থিতাবস্থা জারি রাখার বিষয়ে সহমত হলেও কীভাবে সমস্যা মিটবে তা নিয়ে এদিনও কোনও রফাসূত্র মেলেনি।  

বৈঠকে ভারতের তরফে পূর্ব লাদাখে প্যানগং লেকের দক্ষিণ অংশে ফের নতুন করে চীনা অনুপ্রবেশের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। আলোচনার মধ্যে দিয়েই এই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার দাবিও তোলে ভারত। ভারতের পূর্বের স্থিতাবস্থা রক্ষার চাপে কার্যত চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী নতিস্বীকার করেন বলেও সূত্রের খবর। যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, লাদাখে অশান্তির দায় ভারতের ঘাড়েই চাপিয়েছে চীন। তবে সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। 

আরও পড়ুন – সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হল কেন্দ্র, সাফল্যে খুশি বিরোধীরা

কিন্তু তাতে বরফ গললো কই।  বৈঠক শেষে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফেরাতে দু’দেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে। দ্রুত সীমান্তের পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীকে পূর্বের অবস্থানে ফেরানো প্রয়োজন। এ সব কথা সব বইঠকেইহয় এবং হয়েছে। এর আগেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে রাজি ছিল দুদেশে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায় নি।  
গত মে মাসের গোড়ায় গালওয়ানে ভারতীয় ও চীনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে এই প্রথম দু’দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হল। এর আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আলাদা আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলেছিলেন চীনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। সেনাস্তরেও বৈঠক লাগাতার চলছে। কিন্তু সমাধান সূত্র অধরাই ঠেকে যাচ্ছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি এত তাড়াতাড়ি মেটার নয়।  
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *