নয়াদিল্লি: চলচ্চিত্র জগতে ইন্দ্রপতন৷ ইরফান খানের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ৷ বুধবার সকালে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ মাত্র ৫৩ বছর বয়সে। হিন্দি সিনেমার পাশাপাশি তিনি কাজ করেছেন ব্রিটিশ ফিল্ম এবং হলিউডেও৷ তাঁর অভিনয় দক্ষতা বন্দিত হয়েছে বিশ্ব দরবারে৷
১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে পুশতু ভাষী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় ইরফান আলি খানের৷ তাঁর মা বেগম খান ছিলেন হাকিম পরিবারের সদস্য৷ বাবা জাগিরদার খান ছিলেন পাগড়ি ব্যবসায়ী৷ ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতেন ইরফান৷ তিনি যখন বছর কুড়ির যুবক, তখন সিকে নায়ডু টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু অর্থের অভাবে ওই টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি তাঁর৷ এর পরেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁকেন এই প্রতিভাশালী অভিনেতা৷ ১৯৮৪ সালে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ অ্যাকটিং থেকে স্কলারশিপও পান তিনি৷ তাঁর প্রতিভাকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে সম্মানিত করে ভারত সরকার৷
২০০৪ সালে ‘হাসিল’ ছবিতে সেরা খলনায়ক হিসাবে প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান ইরফান খান৷ এরপর ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ সিনেমার জন্য ফের ফিল্মফেয়ার জেতেন তিনি৷ ২০১১ সালে পান সিং তোমারের জীবনী নিয়ে তৈরি ‘পান সিং তোমার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার ঝুলিতে ভরেন এই অসামান্য অভিনেতা৷ এই ছবির জন্য সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হন তিনি৷ ২০১৩ সালে ‘লাঞ্চবক্স’-সিনেমায় তাঁর অভিনয় সমাদৃত হয় সারা বিশ্বে৷ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমা ‘স্লামডগ মিলেনিয়াম’ ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ে মুদ্ধ হয়েছিল সিনে প্রেমীরা৷ ২০১৬ সালে ‘পিকু’ ছবিতে দীপিকা পাদুকোনের বিপরীতে অভিনয় করে অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ‘রানা’৷ তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সামার’-এর মতো হলিউড ছবিতেও৷
১৯৯৫ সালে ইরফান গাঁটছড়া বাঁধেন বঙ্গতনয়া সুতপা সিকদারের সঙ্গে৷ তিনি নিজেও একজন প্রোডিউসার, ডায়লগ এবং স্ক্রিন প্লে রাইটার৷ বেশ কিছুদিন আগে ট্যুইট করে ইরফান বলেছিলেন, “জীবনে জয়ী হওয়ার সাধনায় মাঝে মধ্যে ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই আমরা। কিন্তু দুর্বল সময় আমাদের সেই গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। জীবনের পরবর্তী ধাপে পা রাখার আগে তাই খানিক ক্ষণ থমকে দাঁড়াতে চাই। অফুরন্ত ভালবাসা আর পাশে থাকার জন্য আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনাদের এই ভালবাসাই আমার যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। তাই ফের আপনাদের কাছেই ফিরছি। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।” এর পর সুস্থ হয়ে 'আংরেজি মিডিয়াম' ছবির মধ্যে দিয়ে কামব্যাকও করেছিলেন। কিন্তু সেই ছবির সাফল্য আর দেখা হল না তাঁর৷