কানপুর: একটি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে আলাপ হয়েছিল তাঁদের৷ এর পর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে রবীনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কানপুর (ইস্ট)-এর আইপিএস অফিসার সুরেন্দ্র কুমার দাস৷ ২০১৪ ব্যাচের অফিসার ছিলেন তিনি৷ কিন্তু বিয়ের ১৫ মাসের মধ্যেই আত্মঘাতী হন সুরেন্দ্র৷
জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকদিন ধরেই কী ভাবে আত্মঘাতী হওয়া যায়, গুগলে তা সার্চ করছিলেন তিনি৷ এর পর একদিন বাড়ির পরিচারিকাকে ইঁদুর মারার জন্য সালফাস পাউডার কিনে আনতে বলেন। পরিচারিকা তা কিনে এনে দেন। ইঁদুরের পাশাপাশি সালফাস পাউডার মানুষের জন্যও অত্যন্ত বিষাক্ত। তার পর ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ির লোকের অগোচরে বিষ খান সুরেন্দ্র৷ পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর৷ এই ঘটনার জন্য তাঁর স্ত্রী রবীনাকেই কাঠগড়ায় তোলে সুরেন্দ্রর পরিবার৷
বিয়ের পর থেকে সুরেন্দ্র এবং রবীনার মধ্যে সম্পর্ক মধুর ছিল না৷ ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকত৷ সুরেন্দ্রর পরিবারের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন তাঁদের ছেলে৷ সুরেন্দ্রর দাদা নরেন্দ্র জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী রবীনা প্রতিনিয়ত তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রকে উস্কানি দিত৷ যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকত৷ নরেন্দ্র বলেন, ‘‘ওঁর বিবাহিত জীবন যে ভালো যাচ্ছিল না, একাধিকবার সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল৷ বিবাহ বিচ্ছেদ করতেও চেয়েছিল৷ রবীনা আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমগত উস্কানি দিত ভাইয়ের কানে৷ যার ফলস্বরূপ, পরিবার ছেড়ে কানপুরে থাকতে শুরু করে সুরেন্দ্র৷ মৃত্যুর তিন মাস আগে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর৷ সেই সময়ও রবীনার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল সুরেন্দ্রর৷ লখনউয়ে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিল ও৷’’ সেই সময় নরেন্দ্র সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সুরেন্দ্রর স্ত্রী রবীনাই তাঁকে এই চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিলেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে৷
একতা নগরে সুরেন্দ্রর মৃতদেহ নিয়ে আসার পর উপচে পড়েছিল মানুষের ভিড়৷ ছেলের অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মা ইন্দু দাস৷ বারবার সংজ্ঞা হারান তিনি৷ তবে বাকি সন্তানরা তাঁর পাশেই ছিলেন৷ ২০০৪ সালে জওহরনগর নবোদয়া বিদ্যালয়, বাল্লিয়া থেকে স্কুল পাশ করেছিলেন সুরেন্দ্র৷ এরপর লখনউয়ের অভাধ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন৷ ২০১৪ সালে আইপিএস অফিসার হন৷ সুরেন্দ্রই ছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে৷ চার ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী৷ তাঁর বাবা ছিলেন সেনা জওয়ান৷
কানপুর পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছিলেন, ওই অফিসারের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, তিনি গত কয়েকদিন ধরেই আত্মহত্যার কৌশল জানার জন্য গুগল সার্চ করছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, সুইসাইডের পরিকল্পনা থেকেই তিনি সার্চ করেছিলেন।