প্রণবের ধূমপান নিয়ে কৌতূহল ছিল খোদ ইন্দ্রিরার, ‘ওঁর মাথা থেকে শুধুই ধোঁয়া বেরবে!’

 চিকিৎসকদের পরামর্শে যখন তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখনও তাঁর মুখে লেগে থাকত পাইপ। নিকোটিন ছাড়া়াই শুধু পাইপ মুখে দিয়েই ধূমপানের দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন। দেশী বিদেশী বহু নেতামন্ত্রীদের কাছ থেকে তাঁর উপহার হিসেবে পাওয়া এমন ৫০০টি পাইপ রয়েছে।

কলকাতা: “যতই চেষ্টা করা হোক, কেউ কখনও প্রণবের মুখ থেকে একটি শব্দও বের করতে পারবেন না।  দেখতে পাবেন তাঁর পাইপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে৷” এভাবেই প্রয়াত প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ধূমপান নিয়ে মজা করতেন খোদ ইন্দিরা গান্ধী। সাংবাদিক তথা  প্রণব মুখার্জির দীর্ঘদিনের বন্ধু জয়ন্ত ঘোষালের স্মৃতিকথায় একসময় তাঁর ধূমপান নিয়ে এমন নানান গল্প শোনা গেছে। তবে সিগারেট নয়, তাঁর পছন্দ ছিল পাইপ। কালো রঙের ডানহিলের পাইপ ছিল তাঁর সব থেকে পছন্দের। এমনকি চিকিৎসকদের পরামর্শে যখন তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখনও তাঁর মুখে লেগে থাকত পাইপ। নিকোটিন ছাড়া শুধু পাইপ মুখে দিয়েই ধূমপানের দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন। দেশী বিদেশী বহু নেতামন্ত্রীদের কাছ থেকে তাঁর উপহার হিসেবে পাওয়া এমন ৫০০টি পাইপ রয়েছে।  সংসদে ধূমপায়ী সাংসদদের নিয়ে ‘স্মোকার্স ক্লাব’-ও তৈরি করেছিলেন তিনি।

তাঁর আরও একটি পছন্দ ছিল বিশুদ্ধ বাঙালি খাবার। অসুস্থ হয়ে পড়ার কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়ি মিরাটী থেকে কাঁঠাল এনে খাওয়াতে বলেছিলেন পুত্র অভিজিতকে। সেই মতো একটি বড় কাঁঠাল এনে বাবাকে খাইয়েওছিলেন তিনি।  দারুন খাদ্যরসিক ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তবে একেবারে মাছে-ভাতে বাঙালি বলতে যা বোঝায়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রিয় খাবার ছিল মাঝের ঝোল আর ভাত। নিজের খাদ্য প্রীতির কথা নিজেই বলতেন তিনি। ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন,  সকালের জলখাবার শেষ করেই মা-কে জিজ্ঞাসা করতেন দুপুরে কী রান্না হয়েছে? আবার দুপুরে খেতে বসে  জেনে নিতেন রাতের খাবারে কি থাকছে?

রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই  কোলকাতায় ঢাকুরিয়ার বাড়িতে এসে পছন্দের বাঙালি খাবার খেয়ে গেছিলেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিশেষ পদ হিসেবে ছিল ভাত, পোস্তো, কলমি শক, আলু পটলের ডালনা, থোর মোচা, মুগের ডাল, চাটনি পাপড় এবং টক দই। রাষ্ট্রপতি ভবনের রাঁধুনির তৈরি মোচার চপও তাঁর দারুন লাগত। একবার ইউপিএ-র ক্যাবিনেট বৈঠকে লালু প্রসাদের মুখে মুজফ্ফর পুরের আম-০লিচুর গুনগান শুনে চুপ করে থাকতে পারেননি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন মুর্শিদাবাদের আম ও লিচুর সঙ্গে অন্য কোনো জায়গার আম-লিচুর তুলনা হয়না। প্রমাণস্বরূপ মন্ত্রীসভার সমস্ত সহকর্মী, জোটসঙ্গী এমনকি প্রধান বিরোধী দলনেতাদের  জন্যেও প্রতিবছর বিশেষ মোড়কে মুর্শিদাবাদের আম ও লিচু উপহার দিতে শুরু করেন।

প্রণব মুখার্জির বাগানের শখও ছিল প্রবল। তাই আজ তাঁর প্রয়াণে যখন মর্মাহত গোটা দেশ, তখন রাষ্ট্রপতি ভবনের 'মুঘল গার্ডেনস'এ জীবন্ত তাঁর স্মৃতি। তাঁরই চিন্তা ভাবনা অনুসারে ২০১৭ সালে, রাষ্ট্রপতির বাসভবনের বাগান স্বাগত জানিয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামেই নতুন প্রজাতির একটি গোলাপকে। একইসঙ্গে প্রয়াত স্ত্রী সুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের নামেও গোলাপী-বেগুনি জাতীয় একধরণের গোলাপ তৈরি করিয়েছিলেন ব্রিডারদের দিয়ে। ২০১৭সালে জানুয়ারিতে ভারতীয় রোজ ফেডারেশনের  পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ এই গোলাপগুলির শংসাপত্র জারি করার পরে 'মুঘল গার্ডেনস'এ এই গোলাপ গাছ লাগানো হয়। 

এর আগে যেখানে রানী এলিজাবেথ, ক্রিস্টিয়ানা ডায়র এমনকি তাজমহলের নামেও যেখানে গোলাপ গাছ রয়েছে সেখানে প্রথমবার কোনো রাষ্ট্রপতির নামেই এমন গোলাপ তৈরি করা হয়েছিল। গ্রামের সাধারণ পরিবার থেকে শিক্ষক আর সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি পদের সম্মান। কঠোর কর্মনিষ্ঠা ও রাজনৈতিক দক্ষতার মেলবন্ধনে সফল জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মত শখ ও সৌখিনতার দিকগুলি কেও সযত্নে আগলে রেখেছিলেন মায়ের আদরের 'পল্টু'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eight =