মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! করোনার দোসর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, জেরবার রাজধানী

মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! করোনার দোসর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, জেরবার রাজধানী

 নয়াদিল্লি:  শরৎকাল একদিকে যখন সারাদেশে যখন হয়ে ওঠে উৎসবমুখী, সেই সময় চিন্তার ভাঁজ পরে কেন্দ্রীয় সরকারের কপালে, বিশেষ করে দিল্লি সরকারের। তার কারণ, দূষণ। হরিয়ানা, পঞ্জাবের মতো সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে ফসল কাটা হয় এই সময়টা। ফলে তার খড় বা অন্যান্য অবশিষ্ট পোড়ানোর ফলে উৎসবের রোশনাই ঢেকে যায় দূষণের কালো অন্ধকারে। কমে যায় দৃশ্যমানতাও। তবে এবারের পরিস্থিতি আলাদা, করোনা অতিমারীর জন্য বাড়তি সতর্কতা রয়েছে, তবে অবধারিতভাবে আসা এই দূষণ নিয়ে উদ্বেগে সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা।

অক্টোবরের সকালে রাজধানী দিল্লিতে ঘুম থেকে উঠে বাইরে রোদের দিকে তাকালে বিষয়টা স্পষ্ট হয়। হাল্কা কালো বা ধূসর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় রাজধানীর আকাশ। কমে আসে দৃশ্যমানতাও। একদিকে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, তার সঙ্গে রয়েছে গাড়ির ধোঁয়া, পাওয়ার প্ল্যান্টগুলি, বিভিন্ন নির্মাণ কাজ, সঙ্গে দীপাবলির বাজির বারুদের ধোঁয়া, সব মিলিয়ে জেরবার রাজধানী দিল্লি। ফি বছর অক্টোবরে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলে। তবে এবছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়েছে সর্বনাশা অতিমারী করোনা ভাইরাস। দীর্ঘ তিনমাসের লকডাউনের পর ধাপে ধাপে আনলক পর্ব শুরু করা হয়েছে। এখন পঞ্চম পর্বের আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লকডাউন করে রাখার কারণে, ভারতে অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেকটা রাশ টানা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে এই মারাত্মক দূষণ রোধ করা যে বড় চ্যালেঞ্জ এবং জরুরি তা বিলক্ষণ মানছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬,৫১,১০৮, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪,০৪৪ জন। ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনার বলি ১,১৫,৯১৪ জন। সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হিসেবে দ্বিতীয় দেশ ভারত, প্রথম-স্থানে রয়েছে আমেরিকা, এবং মৃতের সংখ্যার নিরিখে ভারত রয়েছে তৃতীয়-স্থানে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনার সঙ্গে সঙ্গেই, এই তীব্র দূষণ, দুদিক থেকে মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি পারতে পারে। নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের ডিরেক্টর রণদ্বীপ গুলেরিয়া বলেন, ‘‘কোভিড ১৯ এর সঙ্গে এই দূষণ, যা বিশেষত এই শীতকালে আসে, আমাদের আরও বেশি করে আতঙ্কিত করে তুলছে, তার কারণ, উপযুক্ত ব্যবস্থা বা সতর্কতা নিয়ে। তা নাহলে ব্যাপক-মাত্রায় বেড়ে যাবে আক্রান্তের হার৷’’

২০১৯ সালের সারা বিশ্বের দূষণ বা বাতাসের গুণমান একটি সমীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষা রিপোর্টে যে তথ্য উঠে আসে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৩০টি মারাত্মক দূষিত শহরের মধ্যে ২১টি শহর ভারতের। ২১টি শহরের মধ্যে আবার শীর্ষস্থানে রয়েছে দিল্লি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে যে গুণমানকে নিরাপদ বলে ধরা হয়, তার থেকে ২০গুণ অবস্থা খারাপ দিল্লির বাতাসের। শিগাকোর এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স  বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করে জানিয়েছে, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুণমানে পৌঁছাতে পারা যায়, তাহলে অন্যান্য শহরের তুলনায় দিল্লির বাসিন্দারা অতিরিক্ত ১০.২ বছর বাঁচবে৷

মার্চে লকডাউন জারি করার ফলে, দীর্ঘদিন পর বাতাসে দূষণের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যায়। কয়েকদশক পর প্রথমবার ১০০ মাইল দূরে থাকা হিমালয় পর্বতমালা দেখতে পেয়েছেন উত্তর পঞ্জাবের বাসিন্দারা এবং দিল্লির আকাশ হয়ে ওঠে ঘন নীল। যদিও সেই দৃশ্যসুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আনলক পর্ব শুরু হতেই আকাশের নীলাভ রং ঢেকে দিয়েছে দূষণের কালো ধোঁয়া। একদিকে করোনা অন্যদিকে, দূষণ, দুইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ৫ অক্টোবর তিনি বলেন, “করোনার সঙ্গে সঙ্গে এবছর আমাদের শিশু, পরিবারের জন্য আমাদের দূষণের মাত্রা কমাতেই হবে”। পাশাপাশি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস, সেই জন্য দূষণ জীবনহানি করতে পারে।
 
ইতোমধ্যেই দূষণ রোধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে দিল্লি সরকার। একটি ওয়ার রুম চালু করার পাশাপাশি দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে কেজরিওয়াল সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ডিজেল চালিত জেনারেটর। তবে করোনা অতিমারীর সঙ্গে সঙ্গে দূষণ রোধ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *