নয়াদিল্লি: ২০২০ সালের প্রথমভাগে দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের উপর করোনা মহামারীর হামলার পর থেকেই কার্যত টালমাটাল পরিস্থিতি সর্বক্ষেত্রে। এই মহামারী রুখতে চলা টানা লকডাউনের পরোক্ষ প্রভাব যে দেশ-বিদেশের অর্থনীতির ওপরে পড়তে চলেছে সেই ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের সেই আশঙ্কা সত্যি করেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর। তবে এই মুহূর্তে দেশে সব থেকে বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেকারত্ব।
চলতি বছরের শুরুতেই দেশের বেকারত্বের হার নিয়ে একটি রিপোর্ট সামনে আসে যাতে দেখা দিয়েছে প্রায় প্রত্যেক মাসেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। গত মার্চে দেশজুড়ে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৮০ শতাংশ। কিন্তু সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে মার্চের সেই রেকর্ডকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে এপ্রিলের রিপোর্ট। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই দেশজুড়ে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৭.৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামীণ বেকারত্বের হারকে এবারও ছাপিয়ে গিয়েছে শহুরে বেকারত্বের হার। এপ্রিলের নয় রিপোর্ট অনুযায়ী, যেখানে গ্রামীণ বেকারত্বের হার ৭.২৯ শতাংশ থেকে নেমে ৭.১৮ শতাংশ হয়েছে, সেখানে শহুরে বেকারত্বের হার ৮.২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.২২ শতাংশ।
অন্যদিকে ওই রিপোর্টে জানা গিয়েছে বেকারত্বের হারের নিরিখে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে হরিয়ানা। এই রাজ্যের সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার ৩৪.৫ শতাংশ। তারপরেই অবস্থান রাজস্থান এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকা এই দুই রাজ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৮.৮ শতাংশ এবং ২১.১ শতাংশ। এদিকে বেকারত্বের নিরিখে সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান রয়েছে হিমাচল প্রদেশ, ছত্রিশগড় এবং অসম। এই তিন রাজ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ০.২০, ০.৬০ এবং ১.২ শতাংশ।
তবে আপাতদৃষ্টিতে করোনা মহামারীকে বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অর্থনীতিবিদরা কিন্তু বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের দাবি মন্থর অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণেই কাজের সুযোগ গুলি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সেই কারণেই দেশজুড়ে লাগামছাড়া হারে বাড়ছে বেকারত্বের হার। অন্যদিকে দিন কয়েক আগেই জানা গিয়েছিল চলতি বছরে কর্মসংস্থান কিংবা কাজের সন্ধান করছেন এমন লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে এই হার কমে ৩৯.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ছিল ৪৩.৭ শতাংশ। CMIE- এর তথ্য অনুসারে মহামারী চলাকালীন লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ফলে দেশের কর্মসংস্থানের উপরে ভরসা হারিয়ে নিজস্ব ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মন দিয়েছেন বহু মানুষ। আর সেই কারণেই এই ব্যাপক রদবদল।