তপন মল্লিক চৌধুরী: মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেন্টার ফর ডিজিজ, ডিনামিক্স, ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিসি ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যে ছবিটা তুলে ধরেছিল সেটা অত্যন্ত ভয়াবহ হুয়ায় তাকে মোটের ওপর কেউ গুরুত্ব দেয় নি। আরা জানিয়েছিল, অতি জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সুনামির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ভারতকে।
আরও পড়ুন- নিউমোনিয়া-অ্যালার্জির ওষুধেই সারবে করোনা! দিশা দেখাচ্ছেন বাঙালি কন্যা
ওই সংস্থা জানিয়েছিল, আমেরিকা, ব্রিটেনের আক্রান্তের সংখ্যা অনুমান করতে যে গাণিতিক সূত্র অনুসরণ করা হয়েছে, ভারতের ক্ষেত্রে সেই হিসেব করলে; কমপক্ষে ৩০ কোটি মানুষের প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছ। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ৩০ কোটির মধ্যে ৪০ থেকে ৮০ লক্ষ মানুষের শারীরিক অবস্থা জটিল আকার নিতে পারে। যাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা জরুরি হয়ে উঠবে। তারা তখনই জানিয়েছিল, ভারতে এখন পর্যন্ত যত জন করোনায় আক্রান্ত বলে দাবি করা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যাটা তার তুলনায় অনেকই বেশি। কারণ, পরীক্ষা কম হচ্ছে বলেই করোনা আক্রান্তদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন- মিলবে না পেনশন, সরকারি কর্মচারীদের স্বেচ্ছাবসর প্যাকেজে ‘আচ্ছে দিনে’র আতঙ্ক
আজ সেন্টার ফর ডিজিজ, ডিনামিক্স, ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিসির সমীক্ষাটা কতখানি ঠিক ছিল আমরা বুঝতে পারছি। ভারত ইতালি, স্পেন বা চিনের পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সেটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক, কারণ ইউরোপের আক্রান্ত দেশগুলোর তুলনায় ভারতের চিকিৎসা পরিকাঠানো অনেকটাই দুর্বল। যে দেশে খুব বেশি হলে ১ লক্ষের মতো আইসিইউ বেড সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ লক্ষে পৌঁছনোর কথা সত্যি কল্পনা করা যায় না।
আরও পড়ুন- ফের সাপ্তাহিক লকডাউনের দিন বদল, পাত্তা পেল না বিজেপি রাম-আর্জি
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে গোটা দেশে আগেই শোরগোল পড়েছিল। তারপরই খবর আসে, উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংও আক্রান্ত। অন্যদিকে, রবিবারই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী কমলা রানি বরুণের।গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে দেশে ৭৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫২ হাজার ৯৭২ জনের। এটা আজ মানে সোমবারের পরিসংখ্যান। সেই অনুসারে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রন্ত ১৮ লাখ ৩ হাজার ৬৯৫ আর মৃত্যু ৩৮ হাজার ১৩৫।
আরও পড়ুন- মিডিয়ার দয়া প্রয়োজন হয় না বিজেপির! সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দিলীপ ঘোষের
এরপরের খবর, করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ‘এ২এ’ হ্যাপ্লোটাইপ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে। সেই কারণেই গত কয়েক দিন ধরে দেশে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ভারতের বিজ্ঞানীরা করোনার ১,০০০টি জিনোম সিকোয়েন্স করে এই বিষয়টি জানতে পাএছেন। ভারতে প্রথম জিনোম সিকোয়েন্স করে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। পরে ভাইরাল জিনোমের ওপর নজর রাখা শুরু করে হায়দারাবাদ ও দিল্লির সিএসআইআরের দুটি প্রতিষ্ঠান। এদের অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নমুনার ওপর সমীক্ষা করছিল বলে গোটা দেশের আসল ছবিটা উঠে আসছিল না। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজি প্যান-ইন্ডিয়া কনসোর্টিয়াম তৈরি করে। এদের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল কল্যাণীর এনআইবিএমজি। পশ্চিমবঙ্গে ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল এবং অরোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব নমুনা পাঠানোর দায়িত্বে নাইসেড ও আইপিজিএমইআর।
আরও পড়ুন- সোমেন মিত্রর পর প্রদেশ সভাপতি কে? চর্চায় উঠছে কাদের নাম
সবমিলিয়ে ভারতে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে ভাগ করে ১০টি রাজ্য থেকে নমুনা নেওয়া হয়। শনিবার সেই গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার ‘এ২এ’ হ্যাপ্লোটাইপ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই সংক্রমকটি ভারতে এসেছে মূলত ইউরোপ থেকে, সরাসরি চীন থেকে নয়।এনআইবিএমজি-র তরফে জানানো হয়েছে, করোনা এ দেশে এসেছে মূলত দুটি পথ ধরে। একটি ইউরোপ, অন্যটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ইউরোপ বলতে ইতালি, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস থেকে এসেছে ‘এ২এ’ ধরনটি, যাকে এখন ২০এ, ২০বি, ২০সি, তিনটি ভাগে আলাদা করা হয়েছে। আর চীন থেকে এসেছে ১৯এ/বি ধরন।
আরও পড়ুন- পে কমিশন: আরও বেশি DA পেতে পারেন সরকারি কর্মচারীরা
সাধারন মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সব ধরণ ধারণ বোঝেন না, বোঝার কথাও নয়। কিন্তু যারা সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে ধুপকাঠি জ্বালাতে বলেন, ঘন্টা বাজাতে বলেন তারাও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধরণ ধারণ একেবারেই জানেন বোঝেন না। কিন্তু তারা নিজেদের করণীয় কাজগুলি করেন না বরং বুজরুকি করে আসল সমস্যাকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা তামাসা হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন- খোঁজ নেই রিয়ার, লুক আউট নোটিশ জারির পথে বিহার পুলিশের
মার্চ মাস থেকে মে মাসের মধ্যে হ্যাপ্লোটাইপগুলোর বৈচিত্র্য বিজনানীদের চোখে ধরা পড়ছিল। আর জুন মাসে গোটা দেশে সেই এ২এ ধরনই ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ততদিন দেশ কোনও তৎপড়তা না নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের রাজনৈতিক চাপান উতোরে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এপ্রিলের শেষে এনআইবিএমজি ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬টি জিনোম সিকোয়েন্স পর্যালোচনা করে জানায়, ভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনে একটি মিউটেশনের (ডি৬১৪জি) জন্য মানুষের ফুসফুসের কোষে সহজে ঢুকে পড়ছে এ২এ ধরনের ভাইরাসটি। সোমবার সকালের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনা শনাক্ত ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ।