বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: প্রায় এক বছর অপেক্ষার পর আসছে ভ্যাকসিন। আম জনতার কাছে টিকা পৌঁছানো এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনার টিকাকরণের কাজ শুরু করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা কোভিশিল্ড তৈরি করেছে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট। অন্যদিকে, ভারত বায়োটেক এবং আইসিএমআর এর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে কোভ্যাক্সিন টিকা। দ্বিতীয় টিকাটির তৃতীয় পর্য়ায়ের ট্রায়াল এখনও সম্পন্ন হয়নি। তারমধ্যেই তরিঘরি করে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। ইতমধ্যেই করোনার টিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। যদিও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনকে ব্যাকআপ বলেই মনে করা হচ্ছে, তাতেও প্রশ্ন উঠছে, যে টিকা এখনও সম্পূর্ণ পরীক্ষিত নয়, তাকে ব্যাকআপের তালিকায় রাাখা কতটা যুক্তিযুক্ত।
রবিবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে দুই টিকাকেই ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই। প্রথম দফায় ১ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ২ কোটি করোনা যোদ্ধাকে টিকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দুটি টিকাই ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত বলে জানানো হয়েছে ডিসিজিআইয়ের তরফে। আর তারপরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টুইট করে বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর মতে, এই টিকা তৈরি করা আত্মনির্ভর ভারত গড়ার পথে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। টিকা বলতে এখন দেশের হাতে শুধুমাত্র কোভিশিল্ড, যার ফর্মূলা তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার এবং সেটি এদেশে তৈরি করেছে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট। ফলে বিদেশের ফর্মূলা নিয়ে এদেশে উৎপাদন করা সামগ্রি কীভাবে আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পাশাপাশি ভারত বায়োটেকের তৈরি করা কোভ্যাক্সিন নিয়ে তিনি বলেন, “সরকারকে, ভারত বায়োটেকের তৈরি করা টিকা সম্পর্কে তথ্য জানাতে হবে।” দেশে আত্মনির্ভরতা যদি এতবড় সাফল্যের মুখ দেখে থাকে, তাহলে কেন সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র বিবৃতি দিয়েই কেন উঠে গেলেন আধিকারিকরা? এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “যেখানে এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালই শেষ হয়নি, সেখানে আত্মনির্ভরতার ঢাক বাজানোর যৌক্তিকতা কোথায়?” তাঁর কথায়, “ভারতের চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে পা রাখলে আমরা সবাই গর্ব করি., তারজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আত্মনির্ভরতার বুক ফোলানোর কোনও প্রয়োজন নেই। ভারতে যখন সত্যিই টিকা চালু হয়ে যাবে, সেই টিকা আমাদেই শরীরে যাবে, এবং তার আগেই এতটা হইচই করা হচ্ছে, এটাই আমাদের কাছে আশ্চর্য লাগছে।” তাহলে কি টিকার রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে, রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতেই কি তরিঘরি টিকায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, বাংলার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অবশ্য তেমনটাই মনে করেন এবং তা না করার আবেদন জানিয়েছেন। সিপিআইএম নেতা নীলোৎপল বসুও মনে করেন, “তৃতীয় পর্যায়ের তথ্য প্রকাশ না করে, টিকা ব্যবহার করা অবৈজ্ঞানিক।”
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে সমাজের বিভিন্ন অংশ। রাজনীতির জাঁতাকলেই কি পড়তে হচ্ছে করোনার মতো একটি অতিমারীকে? চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। টিকাকে হাতিয়ার করেই কি ভোট বৈতরণী পার করতে চান গেরুয়া শিবিরের ম্যানেজররা? উলঙ্গ রাজার মতো সেই জন্যই কি সবাই আত্মনির্ভরতার সুরে সুর মেলাচ্ছেন, তাহলে কে এগিয়ে এসে বলবে, রাজা তোর কাপড় কোথায়? প্রশ্নটা থেকেই যায়।