মরছে মানুষ, চড়ছে খিদে, বাড়ছে হাহাকার! তবুও খুলছে না মন্দিরের সিন্দুক!

মরছে মানুষ, চড়ছে খিদে, বাড়ছে হাহাকার! তবুও খুলছে না মন্দিরের সিন্দুক!

নয়াদিল্লি: ভারতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা৷ ২০০ ছাড়িয়েছে মৃত্যু৷ লকডাউনের মধ্যেও বিগত একসপ্তাহে ধরে ক্রমবর্ধমান আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাটা আগামী দিনের জন্য একটা বিপদজ্জনক দিক নির্দেশ করছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের আর্থিক পরিস্থিতিও বড়সড় সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। ইতিমধ্যেই চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়ে দেশজুড়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরাও নিজদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এগিয়ে এসেছে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সাহায্য করোনা মোকাবিলায় কতটা পর্যাপ্ত হবে তার নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে যে ক্ষেত্রটি সরকারের সবথেকে বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারে সেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সেই অর্থে এগিয়ে আসার বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

হিন্দু দেশের নামজাদা মন্দিরগুলিতে যেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গচ্ছিত রয়েছে সেখান থেকে এপর্যন্ত যা সাহায্য এসেছে তা যৎসামান্য। অথচ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন দানের অর্থে ফুলে ফেঁপে উঠেছে মন্দিরগুলির কোষাগার। তাই ওয়াকিবহাল মহলের দাবি এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে এই ক্ষেত্র থেকেই সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ সাহায্য পেতে পারে। যা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্র নয় লকডাউনের জেরে থিতিয়ে পড়া দেশের অর্থনীতিকেও পরোক্ষভাবে অনেকটাই চাঙ্গা করতে পারে।

দেশের সচেতন সাধারণ মানুষও এই দাবিতে সরব হয়েছেন। একজন ছাত্র এবিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই ইমেইল করেছে। টুইটারে 'হ্যাশট্যাগ মন্দিরে দান দেওয়া বন্ধ হোক' ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতে দেশের ৮ টি বিত্তবান মন্দিরের সম্পত্তির একটা হিসেব তুলে ধরা যাক। তবে এই হিসেব মন্দির গুলিতে সঞ্চিত সেই বিশাল,বিপুল সম্পত্তির নয়, যার পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই অজানা। এখানে শুধুমাত্র বাৎসরিক আয়ের একটা আনুমানিক হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। যা ভক্তদের দান থেকে আসে।

তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দেশের সবথেকে ধনী মন্দির:

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী ভেঙ্কটেশ স্বামী তিরুপতি বালাজী মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা।

কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

কেরালার (গুরুবায়ুর) গুরুবায়ুরাপ্পান মন্দির:  আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

জম্মুর শ্রী বৈষ্ণোদেবী মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

নাসিকের (সিড়ডি) সাঁই মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।
পাঞ্জাবের (অমৃতসর) স্বর্ণমন্দির, ওড়িশার (পুরী) জগন্নাথ মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

কেরলের শবরীমালা মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা

মহারাষ্ট্রের (মুম্বাই) সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ১২৫ কোটি থেকে ১৫০ কোটি টাকা।

গুজরাটের (সৌরাষ্ট্রে) সোমনাথ মন্দির: আনুমানিক আয় প্রতিবছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।

মন্দিরের বাৎসরিক সম্পত্তি বা অর্থের পুরো হিসেবটা এই মুহূর্তে কি ধারণা দিচ্ছে? দেশের সরকার, রাজ্য সরকারগুলি তখন ত্রাণের জন্য দেশের নাগরিকদের স্মরণাপন্ন হয়েছে। তখন দেশের এই দুঃসময়ে এই মন্দিরগুলির দরজার মত এর কোষাগারের দরজাও বন্ধ। যদিও কিছু মন্দির, মঠ,আশ্রম সহ দেশের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শুধুমাত্র 'অপইন্ডিয়া' সংবাদ মাধ্যম ছাড়া অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে তেমনভাবে এই তালিকা প্রকাশিত হয়নি। তবে সেই তালিকায় জায়গা হয়নি দেশের সবথেকে ধনী মন্দিরগুলির বেশিরভাগেরই। সাধারণ মানুষের দানের অর্থ দুর্দিনে তাদের সেবায় না লাগলে এই দানের অর্থ কি? এমন প্রশ্নও উঠেছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবেই। আর তাই আসবে মানুষেরই প্রচেষ্টায়।

এই মানুষগুলোও কিন্তু দিবারাত্র পরিশ্রম করে চলেছেন ভগবানকে স্মরণ করেই। কিন্তু তার জন্য মন্দির, মসজিদ,গির্জায় গিয়ে নয় বরং গবেষণাগারগুলিই তাদের কাছে মন্দিরের তুল্য।  ফলে করোনার বিরুদ্ধে যে সাফল্য আসবে তার কৃতজ্ঞতা জানাতে পরবর্তী কালে আবারও কি মানুষ মন্দিরে গিয়ে ভগবানের দ্বারস্থ হবেন মোটা টাকা, সোনাদানা দান হিসেবে তুলে দিতে? নাকি এই ভক্তিপূর্ণ দান সেখানেই তুলে দেবেন যেখানে জীবের সেবাকেই শিবের সেবা হিসেবে মনে করা হয়। যখন করোনার ত্রাসে বিশ্বজুড়ে হাহাকার, প্রাণের ভয়ে ঘরবন্দী মানব সভ্যতা। তখন এটাই ভালো সময় আত্মসমালোচনা করার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *