নয়াদিল্লি: আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা। আর তারপরেই দেশ পাবে ভারতের সাংবিধানিক সর্বাধিনায়ক তথা দেশের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি। এবারের লড়াই এনডিএ’র প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহার মধ্যে। তবে সময় যতই এগোচ্ছে ততই একটু একটু করে রাইসিনা দখলের লড়াইয়ে নিজের জয় নিশ্চিত করছেন দ্রৌপদী। প্রসঙ্গত, নাম ঘোষণার পর থেকেই রাজনীতিবিদদের একাংশের মত ছিল, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্রৌপদীর জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ভোটের নিরিখে তাঁর ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারবেন না বিরোধী পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা। তাদের সেই ভবিষ্যৎবাণীই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে ভোট গণনার প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডের ফলাফলে। জানা গিয়েছে প্রথম রাউন্ডেই রেকর্ড ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন মুর্মু। বর্তমানে চলছে তৃতীয় দফার ভোট গণনা। আর তা শেষ হলে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নাম ঘোষণা হবে ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতির। এ তো গেল এবারের নির্বাচনের কথা। কিন্তু জানেন কি ভারতের অন্যান্য রাষ্ট্রপতিদের লড়াইয়ের ইতিহাস? আসুন জেনে নেওয়া যাক এর আগে কোন রাষ্ট্রপতি কত ভোট পেয়ে রায়সিনা দখল করেছিলেন।
ইতিহাস বলছে পূর্ববর্তী ১৫ বারের মধ্যে ১৪ বারই দেশের এক নম্বর নাগরিক হওয়া নিয়ে চলেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। একমাত্র রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদই পরপর দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে রায়সিনা দখল করেছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সব থেকে বেশি ভোটে জেতার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর দখলে। ১৯৫৭ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৮৩.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন তিনি। সেই বছর মোট ভোট পড়েছিল ৯৮.৯৯ শতাংশ।
অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভোটে জেতার তালিকায় নাম রয়েছে ভারতের তিনজন রাষ্ট্রপতির নাম। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন ভিভি গিরি এবং অপরজন ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৬৯ সালে ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে ভিভি গিরি জয়লাভ করেছিলেন মাত্র ৫০.৯ শতাংশ ভোটে। সেই বছর মোট ভোট পড়ে ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৫০৪ টি। যার মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থিত নির্দল প্রার্থী গিরি পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ২০ হাজার ৭৭ টি ভোট। এরপরেই রয়েছেন ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ২০১৭ সালে দেশের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন রামনাথ। তিনি আবার ছিলেন ভারতের প্রথম দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্রপতিও। ২০১৭ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রামনাথ পেয়েছিলেন মাত্র ৬৫.৬৫ শতাংশ ভোট। যা গত চার দশকের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে যা সর্বনিম্ন ভোট পাওয়ার নজির। সেই বছর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার। বিরোধী প্রার্থী মিরা কুমারের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ৩৪.৩৫ শতাংশ। সেবার রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ভোট পেয়ে জেতার নজির সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। সেবার বিজয়ী প্রার্থী জাকির হোসেন পেয়েছিলেন ৫৬.২ শতাংশ ভোট। সংখ্যার হিসেবে যা মোট ৪ লক্ষ ৭১ হাজার ২৪৪।
এদিনের এই ভোট গণনার প্রথম রাউন্ডেই রেকর্ড ভোট পেয়েছেন মুর্মু। মোট ৭৪৮টি ভোটের মধ্যে মুর্মুর দখলে ছিল ৫৮০ টি ভোট। যেখানে যশবন্ত সিনহা পেয়েছিলেন মাত্র ২০৮টি ভোট। প্রথম রাউন্ডের গণনা শেষে জানা যায় মুর্মুর প্রাপ্ত সাংসদদের মোট ভোটের মূল্য ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার। অন্যদিকে যশবন্তের প্রাপ্ত ভোটের মূল্য মাত্র ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬০০। অন্যদিকে দ্বিতীয় দফাতেও রেকর্ড ভোট পেয়েছেন মুর্মু। জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ১৩৪৯টি ভোট পেয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। একইসঙ্গে যশবন্ত সিনহা এখনও পর্যন্ত পেয়েছেন ৫৩৭টি ভোট। প্রথম দফায় তিনি ২০৮টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩২৯টি ভোট পেয়েছেন।